জিয়াউল কবীর:
মিথ্যা প্রেম ও প্রতারনার আশ্রয়ে ধর্ষন করায় বাঘের হাটের নারী,শিশু আদালত জনৈক যুবকের অর্থদন্ড সহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ প্রদানন করেছে।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায় বাদী সাবিনা আক্তার ফুলহাতা বাজারে আসামীর খান ব্রাদার্স নামক মোবাইল মেরামতের দোকানে বাদী ফ্ল্যাক্সিলোড দিতে যাওয়ার এক পর্যায়ে আসামীর সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে আসামী বিবাহের প্রলোভন দিয়ে বাদীর সাথে অবৈধ ভাবে মেলামেশা করিতে চাইলে বাদী তাকে বিয়ে করে বৈধভাবে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশার কথা বলে। পরবর্তীতে আসামী শহিদুল ইসলাম ১২/০৭/২০১৩ তারিখে বিবাহের কথা বলে বাগেরহাটে একটি অপরিচিত বাসায় এনে ০৩ টি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় এবং তার সাথে বৈধ বিয়ে হয়েছে মর্মে তাকে বলে এবং পরবর্তীতে আসামীর বাড়ীতে এনে মৌলভী ডেকে বিয়ে পড়িয়ে একটি কাবিননামার কপি দিয়ে বলে তার সাথে বাদীর বিয়ে বৈধভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
পরবর্তীতে কয়েক মাস পরে বাদী আত্মীয় স্বজন ঘটনা জানলে বিয়ের কাগজপত্র দেখতে চাইলে এই কাগজাদী তার পরিবারকে দেখালে আত্মীয় স্বজন কাজীর নিকট গেলে কাজী বলে এই নম্বরে এই বাদী এবং আসামীর বিয়ে রেজিষ্ট্রি হয় নাই এবং তাকে বুদ্ধি দেয় যে যেহেতু আসামী একটি বিয়ের কাগজ তৈরী করেছে সেহেতু তাকে তালাক দিলে এই সমস্যা দূর হবে। বাদী আসামীকে তালাক দেওয়ার পর বাদীর আত্মীয় তাকে বিয়ে দেয়। এই বিয়ের খবর শোনার পর এবং পরবর্তীতে আসামী শহিদুল ইসলাম এই তালাক নামা পেলে বাদীর উপর ভীষনভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং তাকে বলে যে বাদী যদি তার সাথে সংসার না করে এবং ঐ ছেলে কে বিয়ে করে তবে সে তার নিকট রক্ষিত বাদীর নগ্ন ছবিসহ সবকিছু বাদীর আত্মীয় স্বজন দের দিবে এবং বাদীর স্কুলের শিক্ষকদের দেবে। পরবর্তীতে আসামীর কথায় বাদী কাজ না করে তখন বাদীর নিকট একটি মোবাইল দিয়ে মেমরী কার্ড পাঠায় এবং বাদীর স্বামীর কাছে সহ বাদীর আত্মীয় স্বজনের কাছে বিভিন্ন উপয়ে তা পাঠায়।
এ ঘটনা চারিদিকে প্রকাশ করে দেয় এবং হুমকি দেয় যে তার কথা না শুনলে ইন্টারনেটে বাদীর এই নগ্ন ছবি ছড়িয়ে দেবে। যার পরে বাদী কোন উপায় না পেয়ে থানায় এই মামলা করে।
বাদীর নাম-সাবিনা আক্তার।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী-রণজিৎ কুমার মন্ডল, এ,পি,পি।
আসামীর নাম-মো: শহিদুল ইসলাম খান, পিতা-আৰ রহমান খান, সাং-উত্তর ফুলহাতা, থানা-মোড়েলগঞ্জ, জেলা- বাগেরহাট।
আসামীপক্ষের আইনজীবীর নাম-জাহিদুল ইসলাম বাবু।
আসামী গ্রেফতার-২১/০৫/২০১৪।
ভিকটিমের মেডিকেল-২২/০৫/১৪।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা-এস,আই সরদার ইকবাল হোসেন।
বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট দাখিল-২২/০৭/১৪
বিচারের জন্য নারী ও শিশু আদালতে প্রেরণ-১৮/০৮/১৪।
অভিযোগ আমলে গ্রহণ-০৯/০৯/১৪।
চার্জ গঠন করা হয়-০৬/০৮/২০১৮।
দীর্ঘ সময় সাক্ষী না আসায় বিগত ৩০/১১/২০২০ তারিখ মামলাটি সাক্ষী ও সাক্ষী ক্লোজের জন্য রাখা হয়।
৩০/১১/২০২০ তারিখে ০২ জন সাক্ষী।
০১/১২/২০২০ তারিখে ০৫ জন সাক্ষী।
০২/১২/২০২০ তারিখ ০৩ জন সাক্ষী গ্রহণ করা হয় এবং আসামীর ৩৪২ ধারার পরীক্ষা করা হয়।
০৩/১২/২০২০ তারিখ ০৬ জন সাফাই সাক্ষী
০৬/১২/২০২০ তারিখ ০১ জন সাফাই সাক্ষী
০৭/১২/২০২০ তারিখ যুক্তিতর্ক
০৮/১২/২০২০ তারিখ রায় হয় যে,মামলার আসামী মো: শহিদুল ইসলাম খান, পিতা- আ: রহমান খান এর বিরুদ্ধে আনীত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০ এর ৯(১) ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ৩০,০০০/- টাকা জরিমানা অনাদায়ে ০১ বছর সশ্রম কারাদন্ড, পনোর্গ্রাফী নিয়ন্ত্রন আইন,২০১২ এর ৮(১) ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় তাকে ০৫ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ২০,০০০/- টাকা জরিমানা অনাদায়ে ০৬ মাস সশ্রম কারাদন্ড,পনোর্গ্রাফী নিয়ন্ত্রন আইন,২০১২ এর ৮(২) ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় তাকে ০৩ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ১৫,০০০/- টাকা জরিমানা অনাদায়ে ০৩ মাস সশ্রম কারাদন্ড,পনোর্গ্রাফী নিয়ন্ত্রন আইন,২০১২ এর ৮(৩) ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় তাকে ০৩ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ২৫,০০০/- টাকা জরিমানা অনাদায়ে ০৩ মাস সশ্রম কারাদন্ড এবং দন্ড বিধির ৪৯৬ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় তাকে ০৩ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ১০,০০০/- টাকা জরিমানা অনাদায়ে ০৩ মাস সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হলো। সবগুলো শাস্তি একসাথে চলার জন্য আদালত আদেশ দেয় বলে বিচারক সুত্রে প্রকাশ।