সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় করা মামলায় সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ তিনজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বাকি ৪৭ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. হুমায়ুন কবীর এর আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
এর আগে সকালে এই মামলায় জেল হাজতে থাকা ৩৪ জন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।
কারাগারে থাকা আসামিরা হলেন- সাতক্ষীরা- ১ আসনের সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আশরাফ হোসেন, নজরুল ইসলাম, মো. আব্দুর রাজ্জাক, শেখ তামিম আজাদ মেরিন, মো. আব্দুর রকিব মোল্যা, মো. আক্তারুল ইসলাম, মো. আব্দুল মজিদ, মো. হাসান আলী, ময়না, মো. আব্দুস সাত্তার, তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, মো. জহুরুল ইসলাম, গোলাম রসুল, অ্যাডভোকেট মো. আব্দুস সাত্তার, আব্দুস সামাদ, মো. আলতাফ হোসেন, শাহাবুদ্দিন, মো. সাহেব আলী, সিরাজুল ইসলাম, রকিব, ট্রলি শহীদুল, মো. মনিরুল ইসলাম, শেখ কামরুল ইসলাম, ইয়াছিন আলী, শেলী, শাহিনুর রহমান, দিদার মোড়ল, সোহাগ হোসেন, মাহাফুজুর মোলা, আব্দুল গফফার গাজী, রিঙ্কু, অ্যাডভোকেট মো. আব্দুস সামাদ, টাইগার খোকন ওরফে বেড়ে খোকন।
পলাতক আসামিরা হলেন- আব্দুল কাদের বাচ্চু, মফিজুল ইসলাম, মো. আলাউদ্দিন, খালেদ মঞ্জুর রোমেল, আরিফুর রহমান, রিপন, ইয়াছিন আলী, রবিউল ইসলাম, মাজাহারুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, আব্দুর রব, সঞ্জু, নাজমুল হোসেন, জাবিদ রায়হান লাকী, কণক, মো. মাহাফুজুর রহমান।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামে ধর্ষণের শিকার এক বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যান। সেখান থেকে যশোরে ফেরার পথে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তৎকালীন এমপি হাবিবুল ইসলামের হাবিবের নির্দেশে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার ওপর একটি যাত্রীবাহী বাস দাঁড় করিয়ে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা চালায় বিএনপিসহ অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
ওই হামলায় তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে এক ডজন দলীয় নেতা-কর্মী আহত হন। এ ঘটনায় থানা মামলা না নিলে ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন বাদী হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন।
মামলাটি বিভিন্ন আদালত ঘুরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করা হয়। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে এসটিসি ২০৭/১৫, এসটিসি ২০৮/১৫ দু’টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন ছিল।
পেনালকোর্ডের মামলাটি (টিআর-১৫১/১৫) সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন ছিল। মামলায় ১৬ জন আসামি পলাতক রয়েছে। গত ২৭ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শেষে কাঠগড়ায় থাকা ৩৪ জনকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. হুমায়ুন কবীর। আজ তিন আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়ার পাশপাশি মোট ৫০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত।