• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:৩২ অপরাহ্ন

সাপাহারে বাড়ছে ক্লিনিক দালালদের দৌরাত্ম

Reporter Name / ৩৩২ Time View
Update : সোমবার, ১৬ মে, ২০২২

সাপাহার(নওগাঁ)প্রতিনিধি: নওগাঁর সাপাহারে যত্রতত্র ভাবে বেড়ে উঠছে প্রাইভেট ক্লিনিক। যেগুলোর বেশিরভাগ গড়ে উঠেছে ভৌত অবকাঠামোতে। এমনকি দাপটের সাথে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন ক্লিনিকের কার্যক্রম পরিচালনা করছে কয়েকটি ক্লিনিক। বেশিরভাগ ক্লিনিকের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মহলে। এছাড়াও কমতি নেই ক্লিনিকের দালালের সংখ্যা। প্রতিনিয়িত দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি দি পপুলার ক্লিনিক নামে এক ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় প্রাণ গেছে এক প্রসূতির।
সূত্রানুপাতে জানা গেছে, এই উপজেলার আয়তন ১৪৪.৪৮ বর্গকিলোমিটার। ১৩৯টি টি মৌজা ও ২৩২টি গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত সাপাহার উপজেলা। এই ধরণের একটি ক্ষুদ্র উপজেলার মধ্যে গড়ে উঠেছে ১১টি প্রাইভেট ক্লিনিক। যেখানে ৯টি ক্লিনিকের রেজিষ্ট্রেশন আছে এবং বাঁকীগুলো গায়ের জোরে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন ক্লিনিকের কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলে জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে। আরো বেশ কয়েকটি ক্লিনিক গড়ে উঠার প্রক্রিয়া চলছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
উপজেলা সদরে অবস্থিত ক্লিনিকগুলো চলছে চিকিৎক বিহীন। সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেবার মতো নেই কোন ডাক্তার। বেশিরভাগ ক্লিনিকে নেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবিকা ও সুইপার। গ্রাম থেকে আসা কিছু অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষতি মেয়েদের দিয়ে সেবিকা ও আয়ার কাজ চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন একটি মহল। বিভিন্ন জায়গা থেকে ভাড়াটে ডাক্তার নিয়ে এসে অপারেশনের কাজ করা হয়। পরবর্তী সময়ে রোগীর কোন সমস্যা হলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষরাই চিকিৎসা প্রদান করে! যাতে করে জীবনের ঝুঁকিতে থাকে সাধারণ রোগীরা।
প্রাইভেট ক্লিনিক গুলো পরিচালনা করার নিয়মটাও যেন অভিনব! বিভিন্ন জায়গায় দালালের ছড়াছড়ি। তিন হাজার টাকায় অপারেশন করে দিবে মর্মে ক্লিনিকে নিয়ে যায়। পরে নানান অজুহাত দেখিয়ে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা রোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও বিস্তর।
প্রতিটি ক্লিনিক ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারে রয়েছে ২/৫ জন দালাল। যারা বিভিন্ন ডাক্তারের চেম্বার, ঔষধের ফার্মেসী সহ সরকারী হাসপাতালের অদূরে ওৎ পেতে বসে থাকে। অপারেশন যোগ্য কোন রোগী পেলে অল্প খরচে অপারেশনের প্রলোভন দেখিয়ে ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে কোন ভাড়াটে ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করে। পরবর্তী সময়ে সেই রোগীর আত্মীয়দের ধরে দেয় লম্বা একটা ব্যয়বহুল খরচের তালিকা। যা হয়তবা তাদের পরিশোধ করার সামর্থ নেই। পরে নিরুপায় হয়ে বাড়ীর জিনিস বিক্রয় করে ক্লিনিকের টাকা পরিশোধেরও অভিযোগ করছেন সাধারণ মহল।
সম্প্রতি সময়ে সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন থিয়েটার চালু করা হয়েছে। এবং সফলতার সাথে কয়েকটি অপারেশন করা হয়েছে। যেখানে সরকারী খরচে অপারেশন করা হয় সেক্ষেত্রে এতগুলো প্রাইভেট ক্লিনিকের কতটা প্রয়োজন এমনটাই প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।
কিছুদিন আগে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের অবহেলার দি পুপুলার ক্লিনিকে জুলেখা (১৯) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
এবিষয়ে জুলেখার শাশুড়ী বলেন “হামরা সরকারী হাসপাতালে বহুকে (বৌমা) লিয়ে যাছনু। কিন্তু একটা লোক আসে কহিলে নরমালে বাচ্চা করিয়ে দিবে। পরে হামার বহুটাকেই মারে ফেল্লে”।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, “আমার স্ত্রীকে বরেন্দ্র ক্লিনিকে অপারেশন করতে নিয়ে যাই। কিন্তু ক্লিনিকের পরিবেশ এতোটাই নোংরা যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। পরে আমি রোগী ফেরৎ নিয়ে আসি।”
আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন,“ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সাথে আমার বৌমার অপারেশনের মোট খরচ চুক্তি হয় ৫ হাজার টাকা। পরে রুম ভাড়া, বাড়তি ওষুধ ইত্যাদি মিলে আমার কাছে ১২ হাজার টাকা আদায় করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।”
এ বিষয়ে সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডাঃ মুহাম্মদ রুহুল আমিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “আমরা দালালের বিষয়ে হাসপাতালকে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। কোন ক্লিনিকের দালাল হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারে না”। হাসপাতালে অপারেশন বন্ধ নাকি চালু আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তারের বদলী হয়েছে। ডিডি স্যারের সাথে কথা বলে আমরা অ্যানেসথিসিয়া ডাক্তারের চাহিদা দিয়েছি। ডাক্তার আসলেই পুরোদমে অপারেশন চালু করা হবে”।
নওগাঁ জেলা সিভিল সার্জন অফিসের সিএস আব্দুল কুদ্দুসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সাপাহারে ৯টি ক্লিনিকের রেজিষ্ট্রেশন আছে। বাঁকীগুলোর রেজিষ্ট্রেশন নেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category




error: Content is protected !!
error: Content is protected !!