নাচোল প্রতিনিধিঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে ভন্ড কবিরাজসহ প্রতারকচক্রের ৫ সদস্যকে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে নাচোল থানা পুলিশ। গত শুত্রবার নাচোল থানার এসআই সোহেল রানা সংঙ্গীয় ফোস নির্য়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে নিয়ামতপুর থানার সহায়তায় নিয়ামতপুর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের নাকইল গ্রামে অভিযান চালিয়ে ভন্ড কবিারজসহ ৫জন আটক করে। আটককৃত ব্যাক্তিরা হলো ভন্ড কবিারাজ মিনুয়ারা বেগম (৪৮),স্বামী- মোঃ আলিমুদ্দীন সরদার,সহযোগী মোঃ আলিমুদ্দীন সরদার (৫৫), পিতা- মৃত সোলায়মান সরদার, মোঃ শাকিল (২২), মোঃ মুকুল আলী (৩৪),উভয় পিতা-মোঃ আলিমুদ্দীন সরদার, সর্বসাং- নাকইল, ইউপি বাহাদুরপুর, থানা- নিয়ামতপুর, জেলা- নওগাঁ ও মোঃ জসিম উদ্দীন (৩২), পিতা-মৃত মাসির উদ্দীন, সাং- ভূজইল, জেলা- চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
নাচোল থানার এসআই সোহেল রানা ও মামলা বাদী ভুক্তোভুগির পরিবারের সদস্য নাচোল উপজেলার ভুজইল গ্রামের মৃত মাসির উদ্দিন এর ছেলে জাবিরুল ইসলাম জানাই, ভন্ড কবিরাজ মিনুয়ারা বেগম (৪৮) তার সহযোগী আলিমুদ্দীন সরদার (৫৫), মোঃ শাকিল (২২), মোঃ মুকুল আলী (৩৪) সর্বসাং- নাকইল, থানা- নিয়ামতপুর, জেলা- নওগাঁ, ও মোঃ জসিম উদ্দীন (৩২), পিতা-মৃত মাসির উদ্দীন, সাং- ভূজইল, থানা- নাচোল, জেলা- চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর বিরুদ্ধে প্রতারনার অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। প্রেক্ষিতে নাচোল থানা পুলিশ তাদের নিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত শুক্রবার তাদের আটক করে। মামলার বাদী আরো বলেন, আমি গত ৫বছর যাবত লেখাপড়ার কারণে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়াতে অবস্থান করছিলাম। মাঝে মাঝে বাড়ীতে আসতাম।আমার পিতা ২০১৯ সালে মে মাসে মৃত্যুবরণ করেন।আমার অনুপস্থিতিতে আমার মা মোসাঃ জোসনারা বেগম, আমার ছোট ভাই মোঃ জাকিরুল ইসলাম ও আমার বড় ভাই জসিম উদ্দীন ও তার স্ত্রী সখিনা বেগম থাকত। আমার ছোট ভাই গত চার বছর যাবৎ শারিরিক ও মানসিক রোগে ভুগছে। আমার ছোট ভাইকে চিকিৎসা করার জন্য বিভিন্ন ডাক্তার ও কবিরাজকে দেখানো হয়। এক পর্যায়ে ২০১৯ সালের অক্টোম্বর মাসে আমার ভাই জসিম ভন্ড কবিারাজ মিনুয়ারাকে সাথে নিয়ে আমাদের বাড়ীতে এসে বলে মিনুয়ারা নামকরা কবিরাজ । সে আমার ছোট ভাইকে সুস্থ্য করতে পারবে। আমার মা অল্প শিক্ষিত হওয়ায় ভন্ড কবিরাজ মিনুয়ারা ও জসিম পরস্পর যোগসাজসে অন্যান্য আসামীর সহায়তায় আমার ছোট ভাইকে সুস্থ করে দিবে বলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাহানায় আমাদের বাড়ীতে এসে আমার ছোট ভাই ও আমার মা এর নিকট থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা ও সোনার গহনা হাতিয়ে নিয়ে মিনুয়ারা ও শাকিলের নামে স্ট্যাম্প এর মাধ্যমে তিন বিঘা জমি বন্ধক নেয়। পরবর্তীতে কবিরাজ মিনুয়ারা ও জসিম আমার অনুপস্থিতে আমার বাড়ীতে এসে আমার মাকে বলে যে, তোমার শত্রুপক্ষ তোমার পরিবারের সবাইকে বান (জাদু) মেরে রেখেছে। এই বান না ছুটালে তোমরা ২১ দিনের মধ্যে মারা যাবে। এই বান ছুটাইতে তিনটি গরু জবাই করে তার রক্ত লাগবে। এই বলে তিনটি গরু ক্রয়ের জন্য ও অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় এর জন্য ৫লাখ টাকা নেয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে। তখন আমার বড় ভাই জসিম আমার ছোট ভাই এর স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে আমার পিতার রেখে যাওয়া জমি অন্যের নিকট বন্ধক রেখে ২৯/৬/২০২০ তারিখ বিকাল অনুমান ০৪.৩০ মিনিটের সময় নাচোল থানাধীন ভূজইল গ্রামে আমাদের বসত বাড়ীতে আমার মা, ছোট ভাই ও অন্যান্য সাক্ষীদের সম্মুখে মিনুয়ারা ও আলিমুদ্দিন সরদারকে ৫লাখ টাকা প্রদান করে। পরবর্তীতে কিছুদিন পর মিনুয়ারা আলিমুদ্দিন সরদার আমাদের বাড়ীতে এসে বান খোলার নামে বলে যে, উক্ত বান খোলা যাচ্ছে না, বানটি যমুনা সেতুপিলার এর সাথে পানির নিচে বাঁধা আছে। বানটি তুলতে হলে ভারত থেকে তার ওস্তাদকে নিয়ে আসতে হবে। তা না হলে পরিবারে সবাই মারা যাবে। এ কথা বলে কবিরাজ মিনুয়ারা আমার মায়ের এর নিকট ৬লাখ টাকা দাবি করে। তখন আমার বড় ভাই জসিমুদ্দিন ও আমার ছোট ভাই এর স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে আমাদের জমি বন্ধক রেখে ইং ৭/১২/২০২১ তারিখ সকাল ১১.৩০ সময় আমাদের বসত বাড়ীতে কবিরাজ মিনুয়ারাকে ও তার সহযোগী আলিমুদ্দিন সরদারকে ৬লাখ টাকা প্রদান করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৮/০৪/২০২২ তারিখ সকাল অনুমানিক ১০.৪০মিনিটের সময় কবিরাজ মিনুয়ারা ও সহযোগী মুকুলকে ভূজইল গ্রামস্থ আমাদের বসত বাড়ীতে এসে ১০লাখ টাকা দাবি করে বলে যদি এই টাকা না দেওয়া হয় তবে জসিম ১৪ দিনের প্যারালাইসিস হয়ে মারা যাবে। তখন আমার ছোট ভাই আমার মা বলে যে এত টাকা আমরা কোথায় থেকে পাব। কবিরাজ মিনুয়ারা বলে তোমাদের বাকী জমি বন্ধক দাও। তাতেও না হলে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে দাও। তখন করিাজের কথামতো আমার বড় ভাই জসিম ও আমার ছোট ভাই আমাদের বাকী জমি অন্যের নিকট বন্ধক রাখে এবং গত২২/৫/২২ ইং তারিখে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৩লাখ টাকা ও ০৬/৯/২২ তারিখে ব্র্যাক ব্যাংক হতে ৪লাখ টাকা উত্তোলন করে আমাদের বসত বাড়ীতে আমার ছোট ভাই ও আমার মায়ের সামনে মিনুয়ারাকে ও মুকুলকে দেয় এবং বাকী টাকার জন্য মিনুয়ারা ৮/৯/২২ তারিখ আমাদের বসত বাড়ীতে এসে আমাদের প্রাণ নাশের ভয়ভীতি দেখায়। এরই ধারাবাহিকতায় আমার বড় ভাই হ অসুস্থ হওয়ার ভান করে। তখন আমরা আমার ভাইকে জিজ্ঞাসা করি তোমার কি হয়েছে। তখন সে জানায় মিনুয়ারাকে বাকী টাকা দিতে না পারাই সে অসুস্থ হয়ে গেছে। তখন বিবাদি জসিম আমাদের বলে কবিরাজকে ফোন দাও আমাকে মোবাইলে ঝাড় ফুক কর আমি সুস্থ্য হয়ে যাবো। আমরা আমার বড় ভাই এর কথামতো মোবাইল করিলে উক্ত আসামী মোবাইল এর মাধ্যেমে বা ফুক করিলে আমার বড় ভাই তাৎক্ষনিক সুস্থ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে আমার বাড়ীতে রাখা “ডেল কোর-আই থ্রি সেভেন জেনারেশন" একটি ল্যাপটপ ২৫/১০/২২ তারিখে মিনুয়ারা ও বিবাদি পরস্পর যোগসাজসে প্রতারনা করে নিয়ে যায়। উক্ত ল্যাপটপ মিনুয়ারার বিভিন্ন সময়ে টালবাহানা করে আমাদের বাড়ী থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ভিডিও ফুটেজ ছিল। পরবর্তীতে আমি বাড়ী এসে বিস্তারিত ঘটনাটি আমি আমার মা ও ছোট ভাই এর নিকট হতে জানার পর মিনুয়াার সম্পর্কে তাহার এলাকাতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি যে, উক্ত মিনুয়ারার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। সে বিভিন্ন মানুষের কাছে প্রতারনা করে বিভিন্ন সময়ে অভাবে অর্থ আত্মসাৎ করে। বিবাদির জসিমের মাধ্যমে আত্মসাতকৃত অর্থ দিয়ে কবিরাজ ১টি মিনি ট্রাক ক্রয় করেছে বলে জানা যায়।