• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনবল সংকটে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

Reporter Name / ১১৭ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০২৩

 

ডি এম কপোত নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ :


আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে জনবল সংকট রয়েছে অনেকদিন ধরেই। জনবল কম থাকায় প্রধান কর্মকর্তা এবং অধীনস্থ কর্মচারীদের কাজের ক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সম্প্রতি অফিস পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পাসপোর্ট অফিসে যে পরিমাণ জনবল নিয়োগের দরকার ছিল, সে পরিমাণ নিয়োগ নেই। এতে কাজের ক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অফিস কর্মচারীদের। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে লোকবল আছেন কর্মকর্তাসহ ৫ জন। যার ফলে পাসপোর্ট করতে ও নিতে আসা ব্যক্তিকে কিছু সময় অপেক্ষা করেই সেবা গ্রহণ করতে হচ্ছে।

মাঝে মধ্যে দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই পাসপোর্ট অফিসের জনবলের বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, সাধারণত পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিরা প্রথমে ১০১ নম্বর রুমে প্রবেশ করেন আবেদন স্বাক্ষরের জন্য। কিন্তু সেক্ষেত্রে কর্মচারী রয়েছে মাত্র দুজন। একজন কাগজপত্র জমা নেই ও একজন কম্পিউটারে বসে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেন। সবকিছু ঠিক থাকলে স্বাক্ষর করেন। তারপর ১০৩ নম্বর রুমে গিয়ে আবেদন পত্রটি স্কান করাতে হয়। এরপর ১০৫ নম্বর রুমে গিয়ে ছবি, স্বাক্ষর, ফিঙ্গার, চোখের স্ক্যান করান। যার ফলে রুম গুলোর সামনে ভিড় লেগে থাকে। এক্ষেত্রে সমাধানের জন্য প্রতিটি রুমে আরও দুইজন করে কর্মকর্তা নতুন করে নিয়োগ হলে, গ্রাহক ভোগান্তি কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিরা ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গত কয়েক দিনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হয়রানি, ভোগান্তি ও ঝামেলা ছাড়াই নির্বিঘ্নে বায়ো-এনরোলমেন্ট ও পাসপোর্ট উত্তোলন করছেন আবেদনকারীরা । ওই অফিসে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ এর অধিক আবেদন জমা হয়। প্রতিদিন সকাল ৯ টার মধ্যে অফিসের প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ শুরু করেন। এখানে রোস্টারিংয়ের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ডেস্কগুলোর কাজ আগে করা হয়। মূলত অফিস কর্তৃপক্ষের টার্গেট থাকে প্রত্যেক আবেদনকারী যেন সেবা পায়।

পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান সেবা প্রার্থীদের সমস্যাগুলো সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। সার্বক্ষণিক সিসিটিভির মাধ্যমে প্রতি ফ্লোর, কাউন্টার মনিটরিং করছেন। অফিসের মূল ফটকে আনসার সদস্যরা ডিউটি পালন করছেন।

নিজের পাসপোর্ট করতে এসে জাহিদ প্রতিবেদকে বলেন, ‘আমি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে এসেছি, একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে আবেদন ফরম পূরণ করে জমা দিয়েছিলাম। আমার কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। এই অফিসে দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা আমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। একটু লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

শিবগঞ্জ উপজেলার মান্নান জানান, ২৩ দিন আগে পাসপোর্ট আবেদন করেছিলাম। সঠিক সময়ের মধ্যেই পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি ।

নাচোল উপজেলার ইসমাইল জানান, পাসপোর্ট করতে এসে একটু সমস্যায় পড়েছিলাম, তারপর বড় অফিসারের রুমে সরাসরি গিয়ে সমস্যার কথা বলি, তিনি সব কিছু শুনে অল্প সময়ের মধ্যেই সমাধান করে দিলেন। পাসপোর্ট করতে নির্ধারিত ফি-এর বেশি টাকা ও লোক ধরতে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সেদিন এখন আর নেই। সমস্যা হলে সোজা বড় কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলা যায়। বড় কর্মকর্তা নিজেই আবেদনে সমস্যা থাকলে সমাধান করে দেন।

পাসপোর্ট করতে আসা একাধিক আবেদনকারী জানান, অনলাইনে ফরম পূরণ করে সঠিক সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট জমা দিয়েছি ও হাতে পেয়েছেন। শুনেছিলাম পাসপোর্ট করতে অনেক সময় সরকারের নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে অধিক অর্থ গুনতে হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখলাম অতিরিক্ত টাকা ছাড়াই পাসপোর্ট পাওয়া সম্ভব। তাদের মধ্যে অনেকেই অবাক হয়ে জানান, এ অফিসের কর্মকর্তাদের আচরণ এবং সেবার মান অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজের স্বচ্ছতাও ফিরেছে।

সেবার মান সম্পর্কে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘পাসপোর্ট পাওয়া কিন্তু বাংলাদেশের বৈধ নাগরিকের অধিকার। আবেদন ফরমে যেসব শর্তাবলি থাকে তা সুন্দরভাবে পূরণ করে দিলে পাসপোর্ট পেতে কোনো ধরনের ঝামেলা থাকে না। আমি এখানে যোগদান করার পর থেকে প্রতিনিয়ত পাসপোর্ট করতে আসা আবেদনকারীদের সমস্যাগুলো শুনে তার সমাধান দেয়ার চেষ্টা করছি। যেসব আবেদনে বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে প্রধান কার্যালয়ে কথা বলে সমাধান করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, পাসপোর্ট করতে আসা অনেকের তথ্যের গরমিল থাকে। যেমন পিতা মাতার নাম, জন্ম তারিখ, ভোটার আইডি কার্ড সহ বিভিন্ন সমস্যা। যাদের আবেদনে বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে, তাদের পাসপোর্ট পেতে একটু সময় লাগছে। এক্ষেত্রে যাতে সময় আরো কম লাগে সে ব্যাপারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান সময়ে ভোটার আইডি কার্ডের সাথে মিল রেখে পাসপোর্ট করতে হলে এখন আর কোটের এপিড ডেপিড এর কাগজ লাগেনা। এ সমস্যা সমাধানের জন্য শুধুমাত্র পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তির নিজ অঙ্গীকার নামা থাকলেই হবে।

তিনি আরও বলেন, অসচেতনতার কারণেই পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিরা ভুল করে থাকেন। যখন একটি পাসপোর্ট এর জন্য কোন ব্যক্তি সর্ব প্রথম অনলাইনে আবেদন করেন, ভুলটি তখনি করেন । যার ফলে, পাসপোর্ট আবেদনকারী ব্যক্তিকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

কি পরিমাণ পাসপোর্ট প্রতিদিন জমা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১৫০ টির বেশি পাসপোর্ট জমা হচ্ছে। কোন কোন দিন এ সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায়। এই পাসপোর্ট অফিসে আমি সহ মোট ৫ জন কর্মকর্তা আছেন। এই অল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ জন পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিকে স্বাভাবিক ভাবেই সেবা প্রদান করা যাবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের অফিসে সার্ভিস দেওয়ার জন্য জনবলের সংখ্যা কম। যার ফলে সমস্যার মধ্যে দিয়েই আমরা সর্বচ্চ ভাবে সেবা প্রদান করার চেষ্টা করছি। আমাদের প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিনের মধ্যে শেষ করতে হয়। প্রায় প্রতি দিনিই আমরা অফিসের সময় শেষ হবার পরও সার্ভিস দিয়ে থাকি। যাতে কেউ ঘুরে না যায়।

এম.এস.হোসেন/


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category




error: Content is protected !!
error: Content is protected !!