• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৩:০৭ অপরাহ্ন

স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেও চিকিৎসা বঞ্চিত চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নবাসী

Reporter Name / ১৪২২ Time View
Update : বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১

সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। স্থানীয়দের অভিযোগ, এখানে নিয়মিত অফিস করেন না চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্টাফরা। রোগীদের সাথে র্দুব্যবহার, ক্লিনিক ভবন পরিষ্কার না করা, রোগীদের ওষুধপত্র না দিয়ে ফেরত পাঠানোসহ নানা অনিয়মের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে।

চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করতে ২০০৯ সালে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না ইউনিয়নবাসী। ফলে বাধ্য হয়েই ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে যেতে হয় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে। পদ্মা নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকার এসব মানুষের আয় সামান্য হওয়ায় অনেকেই এতো দূরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারেন না। ফলে অসুস্থ ও অপুষ্টির কারনে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এই এলাকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্বাস্থ্য।

চরবাগডাঙ্গা কোটাপাড়া এলাকার ইউপি সদস্য এনামুল হকের ছেলে মো. জুয়েল বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ক্লিনিকে অনেক লোকের ভিড় দেখি। কিন্তু অনেকেই ওষুধ পায় না। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দেখি। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই খালি হাতে ফিরে যায়। কারন ওষুধপত্র ঠিকমতো দেয়া হয় না। এমনকি এখানকার উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ও ইনচার্জ ডা. মো. আনোয়ারুল হক ও এমএলএস (পিয়ন) মো. ওবাইদুজ্জামান ঠিকমতো অফিস করেন না।

পঞ্চাশোর্ধ রহিমা বেগম জানান, লাইনে দাঁড়িয়ে ওষুধ নিতে গিয়ে ঘুরিয়ে পাঠায়। বলে বাইরে কিনে নাও। সরকারি ক্লিনিকে যদি ওষুধ না পায় তাহলে সরকার এটা কেন তৈরি করেছে? আমার তে মনে হয় তারা থাকার পরেও ওষুধ দেয় না। এখানকার ডাক্তার ও স্টাফরা খুবই খারাপ ব্যবহার করে।

স্থানীয় গৃহবধূ জমিলা বেগম বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওষুধ না থাকলে বুঝিয়ে বললেই হয়। কিন্তু তারা রোগীদের সাথে চাকরের মতো আরচণ করে। ডাক্তারকে ঠিকমতো দেখাতে পারিনা। মুখে শুনেই ফার্মাসিস্ট দু-একটা ওষুধ দেয়। ডাক্তার অফিসে ঠিক মতো আসে না। আর বেলা ১১টায় আসলেও দুপুর ১টায় বাসায় চলে যায়। এতে দুপুর পর হঠাৎ কেউ কোন রোগে আক্রান্ত হলে আর উপায় থাকে না। ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নিয়ে যেতে হয় সদর হাসপাতালে।

তিনি আরো বলেন, যদি যেকোন ব্যাপারে হাসপাতাল নিয়ে যেতে হয়, তাহলে এতো টাকা দিয়ে সরকার বিল্ডিং আর এতোগুলো মানুষ রেখেছে কেন? তাদের কি কোন কাজ নেই? নাকি সরকারি চাকুরি বলে এভাবে দায়িত্বে অবহেলা করে তারা। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ, এই এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিকের কোন পরিবেশ নেই চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে। রোগী পরীক্ষার টেবিলে ঝাড়ু ও ময়লা পরিষ্কার করার জিনিসপত্র। ময়লা আর্বজনায় পরিপূর্ণ চারদিক। এবিষয়ে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট মো.আব্দুল মোমিন বলেন, এখানকার এমএলএস (পিয়ন) ঠিকমতো অফিসে আসেন না। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ওষুধ না দেয়া ও ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তিনি জানান, সরকারি ওষুধের যে বরাদ্দ তাতে ১৫-২০ দিন যায়। তাতেই এই সমস্যা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।

শনিবার বেলা ১১টায় চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে সেখানকার ইনচার্জ ডা. আনোয়ারুল হককে পাওয়া যায়নি। ফার্মাসিস্ট আব্দুল মোমিন জানান, আনোয়ারুল হক অফিসের কাজে শহরে গেছেন। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সকল অভিযোগের বিষয়ে ইনচার্জ ডা. আনোয়ারুল হক বলেন, আমি নিয়মিত অফিস করি এবং এখানে কোন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা হয় না। সঠিকভাবে সকল রোগীকে ওষুধ দেয়া হয়।

এবিষয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুস সালাম জানান, এমএলএস-এর ব্যাপারে এমন অভিযোগ ছিল। তবে ইনচার্জের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category




error: Content is protected !!
error: Content is protected !!