• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৭:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম
নাচোলে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের সমাপনী অনুষ্ঠিত মহেশপুরে ড্রাগন চাষী মিলনের ২৬শ’ ড্রাগন গাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা কোটালীপাড়া জোর পূর্বক ৭০ বিঘা ঘের তৈরি নাচোলে বিশ্ব “মা” দিবস উদযাপন নাচোলে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কে সংবর্ধনা নাচোলে বজ্রপাতে এক যুবকের মৃত্যু গোমস্তাপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে  আশরাফ আলী আলিম নির্বাচিত নাচোল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আব্দুল কাদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে কামাল উদ্দিন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শামীমা ইয়াসমিন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত। বুধবার নাচোল উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, চেয়ারম্যান পদে ২জন,ভাইস চেয়ারম্যান পদে-৩জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে-২জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আজ বুধবার নাচোল উপজেলা পরিষদের নির্বাচন, চেয়ারম্যান পদে-২জন,ভাইস চেয়ারম্যান পদে-৩জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে-২জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চা শ্রমিকের শতকের রক্তে লেখা ইতিহাস

Reporter Name / ১৭৪ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২০ মে, ২০২১

ব্রিটিশ কোম্পানি একের পর এক চা বাগান প্রতিষ্ঠা করলে প্রয়োজন হয় শ্রমিক সংগ্রহের। ভারতের আসাম, নাগাল্যান্ড, মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, উড়িষ্যা, মাদ্রাজ, বিহার প্রভৃতি অঞ্চলের নিম্নবর্ণের হাজার হাজার মানুষদের মিথ্যা স্বপ্ন ও উন্নত জীবনের আশ্বাস দিয়ে এইসব চা বাগানে নিয়ে আসা হয়। এসকল মানুষেরা যেখানে এসেছিল একটু উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে সেখানে এসে চিত্রপট দেখে সম্পূর্ণই ভিন্ন।

১৯২১ সালের ২০ মে চা শ্রমিকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিলো মেঘনার ঘোলা জল। ২০ মে চা শ্রমিকদের শোষণ-বঞ্চনা নিপীড়ন-নির্যাতন অধিকারহীন ও দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হবার ঐতিহাসিক দিন।
১৮৫৪ সালে সিলেটের মালিনীছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে চায়ের আবাদ শুরু হয়।

কোম্পানি মালিকরা এসকল শ্রমিকদের গহীন জঙ্গল কেটে বাগান তৈরি করার কাজে নিয়োজিত করে নামেমাত্র মজুরিতে। সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনিতে একবেলা খাবারো জুটতোও না অনেক সময়। যার ফলে অনাহারে অর্ধাহারে জীবন পার করতো শ্রমিকরা। একদিকে খাবার সঙ্কট, বাসস্থানের সঙ্কট অন্যদিকে বাগান মালিকদের নির্যাতন-নিপীড়নে অতিষ্ট হয়ে ওঠতে থাকে চা বাগানে নিয়োজিত শ্রমিকদের জীবন। এরকম অসহনীয় পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে মালিক শ্রেণির শোষণ-বঞ্চনা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে বিদ্রোহ ঘোষণা করে চরাঞ্চলের চা শ্রমিকরা। ১৯২১ সালে ৩ মার্চ নিজ মুল্লকে ফিরে যাবার জন্য সিলেট ও তার আশপাশের প্রায় ত্রিশ হাজার চা শ্রমিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাগান ছেড়ে নিজ মুল্লুকে ফিরে যাওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। “মুল্লক চলো” অর্থাৎ নিজ ভূমিতে চলো। তাদের দাবি ছিল ইংরেজদের অধীনে কাজ করবে না ও তাদের নিজেদের ভূমিতে ফিরে যাবে।
চা শ্রমিকরা বুঝতে পারে চা বাগানের মালিকেরা তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে বন্দি করে রাখছে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য। তাই শ্রমিকরা তাদের পূর্বের জীবনে ফিরে যেতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। কোনরূপ চিন্তা-ভাবনা না করেই মাথা গোঁজার ঠাই ছেড়ে বেরিয়ে পরে রাস্তায়। কী খাবে, কীভাবে যাবে এসব চিন্তা একটি বারের জন্যেও তাদের সিদ্ধান্ত থেকে দূরে সরাতে পারেনি। দলে দলে শ্রমিকরা বলতে থাকে বার বার মরার থেকে একবারেই মরবো তবুও নিজ ভূমির দিকে যাত্রা এগিয়ে যাবে। তারা কেবল জানে চাঁদপুর জাহাজ ঘাট। সেখানে যেতে পারলেই জাহাজে চড়ে কলকাতায় ফিরে যাবে। কিন্তু জাহাজ ঘাট যাবে কি করে? সবাই তখন জড়ো হতে থাকে রেল স্টেশনে।

এদিকে চা করেরা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে রেল কর্তৃপক্ষকে রেলের টিকিট চা শ্রমিকদের না দিতে নির্দেশ দেয়। অন্য কোনো উপায় না দেখে স্ত্রী, পুত্র, পরিজন নিয়ে রেলপথ ধরে হাঁটতে থাকে চাঁদপুরের জাহাজ ঘাটের উদ্দেশ্যে ।
উল্লেখ্য, উক্ত আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন পন্ডিত দেওশরন এবং পন্ডিত গঙ্গা দয়াল দীক্ষিত।

কয়েকদিনের হাঁটায় শ্রমিকরা যখন হবিগঞ্জ পৌঁছে সিলেট থেকে তখন হবিগঞ্জের তৎকালীন কংগ্রেস নেতা শিবেন্দ্র বিশ্বাস এগিয়ে আসেন এবং তার নেতৃত্বে তার কর্মীরা পথে পথে শ্রমিকদের খাদ্য সরবরাহ ও রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা করেন। স্থানীয় স্বদেশী কর্মীরাও শ্রমিকদের সাথে যোগ দিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করেন এবং শ্রমিকদের মানসিক শক্তি ও সাহস যোগান। খাদ্য ও পানির অভাবে পথে পথে মৃত্যু হয় অনেক শ্রমিকের। তবুও থেমে থাকেনি তাদের মুল্লকে চলার সংগ্রাম ।

১৯২১ সালের ২০ মে শ্রমিকরা গিয়ে পৌঁছে চাঁদপুর জাহাজ ঘাটে। অন্যদিকে বাগান মালিকরা সরকারের সহযোগিতায় চা শ্রমিকদের প্রতিরোধ করতে চাঁদপুর মেঘনাঘাটে আসাম রাইফেলস এর গুর্খা সৈন্য মোতায়েন করে। ঘাটে জাহাজ যখন ভিড়লো শ্রমিকরা তখন পাগল হয়ে জাহাজে ওঠতে গেলে গুর্খা সৈন্যরা বাধা দিতে থাকে এবং তাদের বিদ্রোহ দমন করার জন্য নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে শত শত শ্রমিক মৃত্যুবরণ করে। শ্রমিকের রক্তে লাল হয়ে উঠে মেঘনার জল।

২০০৮ সাল থেকে দেশের ২৪১টি চা বাগানের প্রায় প্রতিটি বাগানে অস্থায়ী বেদী নির্মাণ করে চা শ্রমিকরা এই দিনটিকে চা শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। চা শ্রমিকদের দাবি এই দিবসটিকে যেন সরকারিভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

ব্রিটিশ উপনিবেশ, পাকিস্তান আমল ও স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও আজো চা শ্রমিকরা নিম্ন মজুরি আর মানবেতর জীবন যাপন করছে। আজো দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দি তাদের জীবন।

মোঃ শাহিন আহমেদ
(সাংবাদিক ও সমাজ সেবক)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category




error: Content is protected !!
error: Content is protected !!