• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম
রহনপুর রেলওয়ে শুল্ক স্টেশনের অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা ও সহযোগিতা কামনায় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফুলকুঁড়ি স্কুলে অনুষ্ঠিত হলো আন্তঃশ্রেণী বিতর্ক প্রতিযোগিতা – ২০২৪ নাচোলে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের সমাপনী অনুষ্ঠিত মহেশপুরে ড্রাগন চাষী মিলনের ২৬শ’ ড্রাগন গাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা কোটালীপাড়া জোর পূর্বক ৭০ বিঘা ঘের তৈরি নাচোলে বিশ্ব “মা” দিবস উদযাপন নাচোলে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কে সংবর্ধনা নাচোলে বজ্রপাতে এক যুবকের মৃত্যু গোমস্তাপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে  আশরাফ আলী আলিম নির্বাচিত নাচোল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আব্দুল কাদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে কামাল উদ্দিন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শামীমা ইয়াসমিন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত।

সরকারি কবরস্থান ভূমি দস্যুর দখলে, গ্রামবাসীকে কবর দিতে বাধা

Reporter Name / ৫৩২ Time View
Update : বুধবার, ৯ জুন, ২০২১

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো একটি সরকারি কবরস্থান দখল করে বসতবাড়ি করার অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের পূর্ব ফাজিলপুর গোরস্তানের ৫৫ শতক জমি দখল করে বাড়ি করছেন একই গ্রামের মৃত আব্বুর জাব্বারের ছেলে মো. আজিজুর রহমান ও মো. সাজিরুদ্দিন। বন্দোবস্ত করার কথা বলে গত প্রায় ৪০ বছর থেকে তারা কবরস্থানের জমিতে বসবাস করছেন। অথচ গোমস্তাপুর উপজেলা ভূমি অফিস ও পার্বতীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস বলছে, ১৯৭২ সালের সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী এখন জমিটি সরকারি ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত। ভূমি অফিসের নথিতে এটি এখনও সরকারি কবরস্থান হিসেবেই রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, কবরস্থান কোনদিনই বন্দোবস্ত হয়নি এবং আগামীতেও হবে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব ফাজিলপুর মৌজার জেল নম্বর ৮৩-এর ২৯৪ নম্বর দাগে কবরস্থানের ৫৫ শতক জমির পুরোটাই দখলে রেখেছেন দুই ভাই আজিজুর রহমান ও মো. সাজিরুদ্দিন। মোট ৫৫ শতকের প্রায় ৩০ শতকে রয়েছে বাড়ি। বাকি জমি নিজেদের পারিবারিক গোরস্থান, বাঁশ ও বিভিন্ন গাছ লাগিয়ে ভোগ করছেন তারা। পূর্ব ফাজিলপুর গ্রামবাসী বলছে, কবরস্থানে বাড়ি করে জোরপূর্বক দখলে রেখেছে তারা। প্রভাবশালী পরিবার হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না। গ্রামবাসীর পক্ষে ভূমি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ ও আদালত একাধিক রায় দিলেও তা মানতে নারাজ দুই ভাই আজিজুর রহমান ও সাজিরুদ্দিন। তাই উপায় না পেয়ে গ্রামের ২০০ পরিবার বাড়ির পাশে ও ফসলী জমিতেই কবর দিচ্ছেন আত্মীয় স্বজনদের।

ষাটোর্ধ্ব আব্দুল খালেক বলেন, দেশে ১৯৭২ সালের পর আর কোন রেকর্ড হয়নি। সেই রেকর্ড অনুযায়ী জমিটি এখনও সরকারি গোরস্থান। অথচ সরকারের থেকে বন্দোবস্ত করার ভুয়া কাগজপত্র করে গ্রামবাসীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও প্রভাব খাটিয়ে কবরস্থানেই বাড়ি করে বসবাস করছে। এর প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো তারাই গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করে। মামলায় পরাজিত হয়েও কবরস্থান ছাড়তে নারাজ দুই ভাই আজিজুর রহমান ও সাজিরুদ্দিন।

পূর্ব ফাজিলপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মালেক (৫০) বলেন, আমাদের বাপ-দাদার কবর রয়েছে এখানে। আমরা ছোট তখন এখানে অনেক কবর দিতে দেখেছি। কিন্তু গ্রামবাসীকে ১৯৭৫ সালের দলিল করা হয়েছে বলে এতোদিন দখল করে আছে তারা। পরে হঠাৎ আমরা জানতে পারি, ভূমি অফিসের সকল নথি ও সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী এটি সরকারি কবরস্থান। এরপর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও উপজেলা ভূমি অফিসে অভিযোগ করলে তারাও গ্রামবাসীর পক্ষে রায় দেন। কিন্তু গায়ের জোরে দখল করে রেখেছে।

কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, গত ৪০ বছর ধরে তারা সরকারি কবরস্থান দখল করে রেখেছে। খুব কষ্টে আছে গ্রামের ২০০টি পরিবারের ইসলাম ধর্মালম্বী মানুষ। কেউ বাড়ির পাশে, কেউ ফসলী জমিতে মাটি দেয়। যা অত্যান্ত কষ্টের সকলের জন্য। কবরস্থানে মাটি দিতে না পেরে মনের মধ্যে যন্ত্রণা নিয়ে দিন পার করে পূর্ব ফাজিলপুর গ্রামবাসী। বর্ষা মৌসুমে মৃত মানুষকে দাফন-কাফন করতে আত্মীয় স্বজনদের কষ্টের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

এবিষয়ে মো. আজিরুর রহমান ওরফে আজিরুদ্দিন বলেন, আমার বাবা মৃত, এবিষয়ে আমরা কিছু জানিনা। আমাদের বাবা কবরস্থানটি কিভাবে কার কাছে বন্দোবস্ত করেছে, তাও জানিনা। কর পরিশোধ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমির খারিজ-খাজনা করতে গেলে ভূমি অফিস তা নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তা দীর্ঘদিন ধরে বাকি আছে।

পার্বতীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী খান জানান, আমার জানা মতে পূর্ব ফাজিলপুর সরকারি কবরস্থানটি অনেক দিন আগের একটি প্রাচীন কবরস্থান। এনিয়ে গ্রামবাসী ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দিলে সালিশের মাধ্যমে গ্রামবাসীকে কবরস্থান ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তারা ছাড়তে চায়নি।

গোমস্তাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার নজির বলেন, ভূমি অফিসের বিভিন্ন কাগজপত্র ও নথি দেখে এটা সুস্পষ্ট যে জায়গাটি এখনও সরকারি কবরস্থানের নামেই আছে। কবরস্থানের জায়গা বন্দোবস্ত নেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

পূর্ব ফাজিলপুর গ্রামের ২০০ পরিবারের জন্য এই সরকারি কবরস্থান ছাড়া আর কোন নির্ধারিত জায়গা নেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category




error: Content is protected !!
error: Content is protected !!