চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য বাংলাদেশ কি প্রস্তুত ?
নিজস্ব প্রতিবেদক.
বাংলাদেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে। যে বিপ্লব পাল্টে দেবে মানুষের জীবনযাত্রার চিরচেনা রূপ। এতটাই পরিবর্তন আসবে যা কল্পনাতীত। পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে নাগরিকদের সম্মিলিতভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। দৈহিক শ্রমের পরিবর্তে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি ও তার গুণগত মানের ক্ষেত্রে যে ব্যাপক উন্নতি হয় তাকেই সাধারণভাবে শিল্প বিপ্লব বলা হয়। ১৭৮৪ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে প্রথম শিল্প বিপ্লব, ১৮৭০ সালে বিদ্যুতের আবিষ্কারের ফলে দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব, ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট আবিষ্কারের মাধ্যমে তৃতীয় শিল্প বিপ্লব এবং বর্তমানে ডিজিটাল বিপ্লবের মধ্য দিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কিংবা তার পরবর্তী সময়ে ডিজিটাল সংযুক্তির জন্য যতটুকু প্রস্তুতির দরকার বাংলাদেশ তা সম্পন্ন করেছে। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ যখন ৫জি চালুর বিষয়টি চিন্তাও করেনি তখন বাংলাদেশ ৫জি চালুর জন্য প্রস্তুত। আগমী ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে চালু হতে যাচ্ছে ৫জি। ২০২৩ সালে আসছে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দক্ষ জনসম্পদ জরুরী। এই লক্ষ্যে ৩৯টি হাইটেক পার্ক নির্মাণসহ যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতির সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে শিল্প বিপ্লবের ফলে। শিল্প বিপ্লবগুলো বদলে দিয়েছে সারা বিশ্বের গতিপথ, বিশ্ব অর্থনীতির গতিধারা। সামনে আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ইন্টারনেট অব থিংস বা যন্ত্রের ইন্টারনেট, যা কিনা সম্পূর্ণরূপেই মানবসম্পদের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।
এ বিষয়টি নিয়েই আজকের প্রবন্ধ। ইন্টারনেট অব থিংস এখন আলোচনার বিষয়। আমাদের চারপাশের অনেক বস্তু যখন নিজেদের মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ করবে এবং নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে সেটাই হবে ইন্টারনেট অব থিংস। ইতোমধ্যে আমরা গুগল হোম, এ্যামাজনের আলেক্সার কথা শুনেছি। এর ফলে ঘরের লাইট, সাউন্ড সিস্টেম, দরজাসহ অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আগামীর প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সরকারী এবং বেসরকারী খাতকে সমানভাবেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এশিয়ান টাইগার খ্যাতি পেয়েছে। বাংলাদেশের হাইটেক পার্কগুলো হবে আগামীর সিলিকন ভ্যালি। ইতোমধ্যে দেশটির ৬৪টি জেলার ৪ হাজর ৫০১টি ইউনিয়ন পরিষদের সবটিই ডিজিটাল নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সরকারের প্রধান সেবাসমূহ বিশেষ করে ভূমি নামজারি, জন্মনিবন্ধন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা চাকরিতে আবেদন ইত্যাদি ডিজিটাল পদ্ধতিতে নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি মৌলিক সেবাসমূহ প্রদানের বিষয়টিকে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী করে তুলেছে। কাজেই সার্বিক বিশ্লেষণে ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে আরও কর্মক্ষম, ন্যায়সঙ্গত ও সমৃদ্ধতর বাংলাদেশ। বিকাশের মাধ্যমে অনেকখানি বদলে গেছে বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম। প্রান্তিক লোকজন কোন ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলা ছাড়াই সহজে অর্থ লেনদেন করতে পারছেন। বিকাশে প্রতিদিন এখন লেনদেন হচ্ছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব অর্জনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে ক্লাউড কম্পিউটিং, ইন্টারনেট অব থিংস এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই তথ্যপ্রযুক্তিতে অনেক অগ্রগতি সাধান করেছে।
আগামীর প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতেও প্রস্তুত বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সরকারী-বেসরকারী উভয় খাতকেই সমানভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরেও ই-গভর্নেন্স, সার্ভিস ডেলিভারি, পাবলিক পলিসি এ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন, তথ্যপ্রযুক্তি, বিকেন্দ্রীকরণ, নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা এবং এসডিজি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ ও প্রশাসনিক নীতি কৌশল নিয়ে বাংলাদেশের সরকারী কর্মকর্তাদের ক্লাউড সার্ভার, ইন্টারনেট অব থিংস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ১৯৭১ সালে বিজয়ের পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাঙ্গামাটি জেলার বেতবুনিয়ায় একটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র চালু করেছিলেন। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে তথ্যপ্রযুক্তিসহ সব খাত সংস্কার করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন তিনি। মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে দেশের জন্য একটি শক্ত ভিত্তিও গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু ঘাতকের বুলেট বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা স্থবির করে দেয়। ফলে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়তে থাকে বাংলাদেশ।
অবশেষে, ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ আবার সামনে এগিয়ে যেতে শুরু করে। বিগত এক দশকে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় অনন্য উচ্চতায়। বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বিস্ময়। বাংলাদেশ এখন দুটি সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে সংযুক্ত। তৃতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে সংযুক্তির কাজ চলছে। দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে এনেছেন শেখ হাসিনা। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ আকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট উড়িয়েছে। শেখ হাসিনার অসামান্য দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এশিয়ান টাইগার বলে পরিচিতি পেয়েছে বিশ্বজুড়ে। বিশ্বের বহু দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন শক্তিশালী। এক সময়ের রুগ্ন অর্থনীতির দেশটি এখন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে।
এক শ’ ডলারের নিচে ছিল যে মাথাপিছু আয় তা এখন বেড়ে ২৫৫৪ ডলারে পৌঁছেছে। কমেছে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের প্রকোপ। উন্নত হয়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান। শিক্ষা ও চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্তি বেড়েছে। বাংলাদেশের হাইটেক পার্কগুলো হবে ভবিষ্যতের সিলিকন ভ্যালি। সরকারের প্রধান সেবাগুলো, বিশেষ করে ভূমি নামজারি, জন্মনিবন্ধন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা চাকরিতে আবেদন ইত্যাদি ডিজিটাল পদ্ধতিতে নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে ফলপ্রসূ করতে ডিজিটালাইজেশনের বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এরই মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের খেতাব অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে। দেশের তরুণ প্রজন্মকে ডিজিটাল শিক্ষায় দক্ষ করে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে