• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
রহনপুর রেলওয়ে শুল্ক স্টেশনের অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা ও সহযোগিতা কামনায় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফুলকুঁড়ি স্কুলে অনুষ্ঠিত হলো আন্তঃশ্রেণী বিতর্ক প্রতিযোগিতা – ২০২৪ নাচোলে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের সমাপনী অনুষ্ঠিত মহেশপুরে ড্রাগন চাষী মিলনের ২৬শ’ ড্রাগন গাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা কোটালীপাড়া জোর পূর্বক ৭০ বিঘা ঘের তৈরি নাচোলে বিশ্ব “মা” দিবস উদযাপন নাচোলে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কে সংবর্ধনা নাচোলে বজ্রপাতে এক যুবকের মৃত্যু গোমস্তাপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে  আশরাফ আলী আলিম নির্বাচিত নাচোল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আব্দুল কাদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে কামাল উদ্দিন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শামীমা ইয়াসমিন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত।

 প্রধান শিক্ষককে পেটালেন মেয়র মোখলেসুর রহমান ।

Reporter Name / ৫৬৭ Time View
Update : সোমবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২২

নিউজ ডেস্কঃ

বৃহস্পতিবার এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় বহিষ্কৃত দুই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের তদবির না শুনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রধান শিক্ষককে মারধর ও লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমান ও মেয়র বাহিনীর লোকজনের বিরুদ্ধে। শনিবার (১৫ অক্টোবর) রাত ১১টায় শহরের ঢাকা বাস টার্মিনাল এলাকায় অবস্থিত আরাফাত বোর্ডিং-এ ঘটনা ঘটে।

মেয়র কর্তৃক লাঞ্ছিতের শিকার ওই শিক্ষক জেলা শহরের ঐহিত্যবাহী রাজারামপুর হামিদুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও পৌর আওয়ামী লীগের ৮নং ওয়ার্ডের দপ্তর সম্পাদক সামিউল ইসলাম।

জানা গেছে, এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নকল করার অপরাধে দুই ছাত্রকে বহিষ্কার করে রাজারামপুর হামিদুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) এসএসসি-টেস্টের ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষায় মোবাইল ফোন দেখে নকল করছিল ওই দুই ছাত্র। পরে ধরা পড়লে শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনা করে ওই দুই ছাত্রকে নিয়ম অনুযায়ী বহিষ্কার করা হয়।
তবে এ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য তদবির করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান। কিন্তু নিয়ম লঙ্ঘন করে ওই দুই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করায় বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সামিউল ইসলামকে পিটিয়েছেন মেয়রের লোকজন। মেয়র বাহিনীর হামলায় আহত হন প্রধান শিক্ষক সামিউল ইসলাম।

শনিবার রাত ১১টার দিকে ঢাকা বাস টার্মিনাল এলাকায় অবস্থিত আরাফাত বোর্ডিং-এ দলবল নিয়ে সেখানে হাজির হন মেয়র। সে সময় তার সঙ্গে অর্ধশত নেতাকর্মীও ছিল।

প্রধান শিক্ষক সামিউল ইসলামের অভিযোগ, বহিষ্কৃত ওই দুই শিক্ষার্থীর পরিবার মেয়রের কাছে তাদের সন্তানদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করে। পৌর মেয়রের নির্দেশে ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তোহিদুল ইসলাম ও ৯ ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামশুল হক মোবাইল ফোনে আমার কাছে অনুরোধ করেন এবং ওই দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে চাপ প্রয়োগ করেন। শনিবার পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান আমাকে ফোন করে ওই দুই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। কিন্তু আমি তাকে বলি এটা করলে নিয়ম লঙ্ঘন হবে। তবে আপনি যখন বলছেন, শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টা দেখবো। সে সময় মেয়র আমাকে উত্তেজিত হয়ে বলেন আমি কে বলছি, এটা কি জানেন। আমি যা বলছি আপনি তাই করবেন। আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? জানতে চাইলে মেয়র আমাকে তার পার্কে ডাকেন। আমি যেতে না চাইলে আমি কোথায় আছি জানতে চান। এ সময় আমি আরাঢাত বোর্ডিং-এ আছি বলে জানাই।

কিছুক্ষণ পরে সেখানে দলবল নিয়ে চলে আসেন মেয়র। মেয়রের সঙ্গে থাকা লোকজন আমাকে মারধর শুরু করেন। মেয়রও উত্তেজিত হয়ে আমাকে আঘাত করেন। মেয়রের নির্দেশেই তার পিএস আব্দুল জলিল, ছাত্রলীগ নেতা ফয়সালসহ মেয়রের বাহিনী আমাকে মারধর করেছেন। সে সময় আমি ভয়ে দুই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার কথা বলেছি। তারপরও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হলে কাল থেকে স্কুলে যাবি না বলে হুমকি দেন। আমি এখনও চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছি বলে জানান প্রধান শিক্ষক।

রাজারামপুর হামিদুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বাউবি’র চাঁপাইনবাবগঞ্জ উপ-আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমন্বয়কারী শামসুজ্জামান বাবু জানান, প্রধান শিক্ষক মারধরের বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। দাপ্তরিক কাজে ঢাকা থাকায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। এলাকায় গিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এদিকে প্রধান শিক্ষক সামিউল ইসলাম আজ রোববার (১৬ অক্টোবর) বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সভা করেছেন। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার প্রত্যাহার এবং মেয়রের তদবির ও প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিচারের দাবিও জানান ।

প্রধান শিক্ষক আরও জানান, এ ঘটনায় তিনি এখন পর্যন্ত কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করলেও তিনি বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শামসুজ্জামান বাবুকে জানিয়েছেন। আলোচনা সাপেক্ষে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, শরীফুল ইসলামের আরাফাত বোর্ডিং-এর ভেতর তার উপস্থিতিতেই মেয়র ও তার লোকজন প্রধান শিক্ষককে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন। এ বিষয়ে শরীফুল ইসলামের বড় ভাই ও পৌর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল জলিল জানান, মারধরের পর তিনি সেখানে উপস্থিত হন এবং সেখানে উত্তেজিত অবস্থা বিরাজ করছিল। পরে সেখান থেকে সবাইকে সরে যেতে বলেন এবং প্রধান শিক্ষক যাতে আবার লাঞ্ছিত না হন সেজন্য লোক মারফত তাকে বাসায় পৌঁছে দেন। এ সময় পৌর মেয়রসহ সেখানে তার লোকজন উপস্থিত ছিল।
তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক এ বিষয়ে অভিযোগ করলে দলীয়ভাবে মেয়রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকা বাস স্ট্যান্ডের আরাফাত বোর্ডিং-এ আসেন মেয়র মোখলেুসর রহমান। এসে মেয়রই প্রথম প্রধান শিক্ষক সামিউল ইসলামকে মারধর শুরু করেন। পরে তাকে অফিসে ঢুকিয়ে আরেক দফা মারধর করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

তবে শিক্ষককে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, কেউ অভিযোগ করলেই তো সত্য হয়ে যায় না। এমন ঘটনায় আমি জড়িত নই।

এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ জানান, প্রধান শিক্ষককে মারধরের বিষয়টি আমি শুনেছি। প্রধান শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন। তবে প্রত্যেকেরই এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ করা উচিত। যদিও এখন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ এ বিষয়ে জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আমাকে কিছুই জানায়নি। তবে জানানো উচিত ছিল। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category




error: Content is protected !!
error: Content is protected !!