মোমেনুর রশিদ সাগর: দুই সপ্তাহ হলো নিজ
ঘরে সুখে দিনকাটছে কদভান বেওয়া (৭২) ও তার পঞ্চাশোর্ধ বয়সী প্রতিবন্ধী ছেলে আশকর আলীর। খোলা আকাশের নীচে দুর্বিসহ জীবনযাপন থেকে মুক্তি মিলিছে তাদের।
পথঘাট-হাটবাজরে অসহায় পড়ে থাকতে দেখে দয়া করে যে যা দিত তা খেয়েই চলতো যাদের জীবন, হঠাৎ যেন আসমানের চাঁদ এসে ধরা দিয়েছে তাদের সংসারে। হঠাৎ নতুন ঘর-বিছানা, আসবাবপত্র, জামা-কাপড়, গোসলখানা, টয়লেট থেকে শুরু করে সবকিছুতে পরিপূর্ণ হয়েছে তাদের সংসার।
বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে মা-ছেলেকে নতুন কাপড়ে সাজিয়ে উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী বাজার থেকে তুলে এনে পাশের কাশিয়াবাড়ী গ্রামে নির্মিত নতুন ঘরের চাবি তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কদভান বেওয়ার এক আত্মীয়ের জমিতে নতুন ঘরসহ সংসারের যাবতীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিউ লাইফ ফাউন্ডেশন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭০ সালে পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী গ্রামের আলতাব হোসেনের সঙ্গে পাশের বগুড়া জেলার বাসিন্দা কদভান বানুর বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্যজীবনে প্রতিবন্ধী ছেলে সন্তান আশকর আলীর জন্ম হয়। পরের বছরই তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর একই গ্রামের তজের প্রধানের সঙ্গে বিয়ে হয় কদভান বানুর। সেখানে কল্পনা ও গোলাপী নামে তার গর্ভে দুটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। একটা সময়ে তার এ সংসারও টেকেনি। বর্তমানে দু মেয়ে স্বামীর ঘরে।
এরপর থেকে প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে মানুষের বাড়ীতে কাজ করে অন্যের বাড়ীতে থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন কদভান বানু। একটা সময়ে এসে বয়সের ভারে নূয়ে পড়েন কদভান। সেই সাথে শরীরে বাসা বাঁধে নানা রোগ-ব্যাধি। ঠিকভাবে কথাও বলতে পারেন না।
মানুষ তাড়িয়ে দিলে পথঘাট-রাস্তা-ঘাটে খোলা আকাশের নীচে অথবা পরিত্যাক্ত কোন স্থানে খেয়ে-না খেয়ে তীব্র শীত উপেক্ষো করে চলছিল তাদের জীবন। এমন দুর্বিসহ জীবনের চিত্র নজরে এলে মা-ছেলেকে স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ করে দেন।
এ ব্যাপারে নিউ লাইফ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবু জাহিদ নিউ জানান, কাশিয়াবাড়ী বাজারের আমিন মার্কেটের বারান্দায় কনকনে শীতের রাত্রে অসহায় মা-ছেলের রাত্রি যাপনের দৃশ্য আমার নজরে আসে।এরপর আমি তাদের নিকট এক আত্মীয়ের জমিতে থাকার ঘর নির্মাণসহ জীবনধারণের সাধ্যমত ব্যবস্থা করি। তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে ভূমিকা রাখতে পেরেছি এটাই আমার পরিতৃপ্তি। জীবনের বাকীটা সময় এ ধরণের মানবীয় কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই। এটাই আমার স্বপ্ন।