শিবগঞ্জের ২ অন্ধ সন্তান সহ অসহায় সুপচাঁন-রীমার পাশে দাড়ানোর কি কেউ নেই ?
হাবিবুল বারি হাবিব, শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ :
সুপচাঁন আলী । চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌরসভার ৩ নাম্বার ওয়ার্ডের বড়চক দৌলতপুর এলাকার একজন বাসিন্দা । দরিদ্র, অসহায়, ভূমিহীন ও সুবিধাবঞ্চিত কোনটিতেই যেন কমতি নেই তার । দীর্ঘদিন থেকেই হাঁপানি সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত কর্মহীন এই ব্যক্তিটির কাঁধেই ছিল পাঁচ সদস্যের পরিবার চালানোর এক গুরুদায়িত্ব । এরই মধ্যে গত পাঁচ বছর আগে তার পাঁচ বছর বয়সী পুত্র সন্তানের দুচোখেই টিউমার ধরা পড়ে । শূন্যহাতে আশেপাশের মানুষের সহযোগীতা নিয়েও সন্তানের চিকিৎসা করাতে না পেরে শেষ সম্বল ভিটেমাটিটুকু বিক্রি করতে হয় তাকে ।
প্রায় তিন লক্ষ টাকা খরচ করে সন্তানের দুই চোখ তুলে ফেললেও কিছুদিন পর মারা যায় তাদের আদরের সন্তান । শেষ সম্বল ও সন্তান উভয়টিই হারিয়ে রাস্তায় বসে যায় পরিবারটি । ভোগু বিশ্বাস নামীয় স্থানীয় এক ব্যক্তি তার আমবাগানে কুঁড়েঘর তুলে বসবাসের সুযোগ দেন অসহায় পরিবারটিকে । অন্যের বাসায় কাজ ও ভিক্ষা করে কোন রকমে চলতে থাকা পরিবারটিকে নিয়তি কিন্তু ছেড়ে যায়নি ।
মেজো সন্তানটির বাম চোখে আবারো ধরা পড়ে টিউমার । চিকিৎসক চোখ তুলে ফেলতে বললে অবুঝ শিশুটি তার পিতামাতার প্রতি আকুতি জানায় তাকে যেন অন্ধ না করা হয় । এক দিকে চিকিৎসকের চোখ তুলে ফেলার পরামর্শ, অন্যদিকে চোখ না তুলতে সন্তানের আকুতি, খরচের বিষয়টিতো আছেই । এমতাবস্থায় মা-বাবার বুক ফাটা কান্না ছাড়া আর কি থাকতে পারে ? কিন্তু এতেই কি শেষ ? আবারো নিয়তির ভয়াল থাবা যেন আঘাত করলো অসহায় সেই পরিবারটির উপর ।
ফুটফুটে উজ্জ্বল চেহারার আড়াই বছরের ছোট সন্তানটিরও দু চোখেই ধরা পড়ে ক্যান্সার । দ্রুত চোখ তুলে না ফেললে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকার কথা জানান চিকিৎসকরা । একদিকে পাঁচ বছর আগে দুচোখ তুলে ফেলা বড় সন্তানের মৃত্যু এবং মেজো সন্তানের বাম চোখে টিউমার আবার আদরের ছোট সন্তানের দুচোখেই ক্যান্সার । এমতাবস্থায় ভূমিহীন ও দরিদ্র এই পরিবারের কর্তা বাবা মায়ের অসহায়ত্ব কোন পর্যায়ে যেতে পারে ?
দুচোখ ভরা অশ্রু আর বুক ফাটা কান্না নিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে সহযোগীতার কিছু অর্থ জোগাড় করে সন্তানের জীবন বাঁচাতে গিয়ে বাধ্য হলো দু চোখ উঠিয়ে ফেলতে । গত ১২ ই জানুয়ারি ২০২২ তারিখ রাজশাহী মেডিকেলে আড়াই বছরের আদরের ফুটফুটে সন্তানটির দু চোখ তুলে ফেলতে হয় ।
হঠাত করে চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায় দুধের বাচ্চাটির মা বাবার মুখ দেখার স্বাদ । আর কোনদিন সে দেখতে পাবে না মায়ের মায়াবি মুখ, দেখতে পাবে না চকলেট সহ দূর থেকে ডাকতে থাকা বাবার হাত । সমবয়সী বাচ্চাদের দৌড়াদৌড়ি ও হাঁসিমজা করে খেলাধুলার শব্দ কানে এসে মন চাইলেও পারবেনা সে অংশগ্রহন করতে । প্রবল ইচ্ছে থাকলেও দেখতে পাবে না আর পৃথিবীর কোন আলো । এমতাবস্থায় সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং সকলের সহযোগীতা নিয়ে মেজো সন্তানটির চিকিৎসা নিয়ে ও অন্ধ ছোট শিশুটিকে নিয়ে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন মো: সুপচাঁন আলী ও তার সহধর্মীনি মোসা: রীমা খাতুন ।
বর্তমানে নিঃস্ব ও অসহায় এই পরিবারটি তাকিয়ে আছে সরকার ও জনপ্রতিনিধি সহ সকলের সার্বিক সহযোগীতার আশায় । এদিকে ভূমিহীন হিসেবে সরকারি ঘরের জন্য স্থানীয় মাননীয় সংসদ সদস্য সহ সরকারি দপ্তরে কয়েক দফায় দরখাস্ত দিয়েও আশার মুখ দেখেনি পরাবিরটি । সরকারি একটি বাড়ি সহ সার্বিক সহযোগীতার জন্য বর্তমান সরকারের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বৃন্দ এবং দায়িত্বরত প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ সহ সকলের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন অসহায় পরিবারটি । সেই সাথে তার এলাকাবাসী পরিবারটির সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান । এ বিষয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: জুম্মন আলী বলেন, মো: সুপচাঁন আলী আসলেই একজন অসহায় ব্যক্তি, তার ৩ সন্তানের প্রথম সন্তান অন্ধ হয়ে মারা গেছে, দ্বিতীয় সন্তানের চোখে টিউমার, অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেনা, আবার ছোট সন্তাটিরও দু’চোখ তুলে ফেলা হয়েছে । সে নিজেও হাঁপানি রোগী হওয়ায় কোন কর্ম করতে পারছেনা । অপরদিকে আমি যাচাই করে দেখেছি, সে একজন ভূমিহীন ব্যক্তি । পৌরসভায় সরকারি বাড়ির বরাদ্দ না আসায় আমি বাড়ির ব্যবস্থা করতে পারিনি, তবে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এই ভূমিহীন অসহায় পরিবারটিকে একটি সরকারি বাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য । আমরা পৌরসভা থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগীতা করতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু সেটুকু তার অসহায়ত্বের তুলনায় অপ্রতুল । এসময় স্থানীয় এবং দেশ-বিদেশে অবস্থান কারী সকলের প্রতি পরিবারটিকে সাধ্যমত সহযোগীতা করতেও আহ্বান জানিয়েছেন কাউন্সিলর মো: জুম্মন আলী ।
এজন্য নিম্নে দেয়া ফোন নাম্বারে যোগাযোগ ও বিকাশ নাম্বারে আপনারা সহযোগীতা পাঠাতে পারেন । যোগাযোগ ও বিকাশ (পার্সোনাল) নাম্বার : ০১৭৭০৭৮৩৬৪৮