রাস্তায় বসে ইফতার করলেন নওগাঁ জেলার পুলিশ সুপার প্রকৌশলী জনাব আবদুল মান্নান মিয়া
সাধারণ জনগণকে করোনার ভয়াল থাবা থেকে বাঁচাতে নিজেদের জীবনের মায়া তুচ্ছ করে বৈশাখের তীব্র দাবদাহে গরমে, ধুলায়, ধোঁয়ায় গলদঘর্ম হয়ে দেশ ও জনগণের জন্য প্রানান্তকর পরিশ্রম করে চলেছে নওগাঁ জেলা পুলিশ তথা বাংলাদেশ পুলিশের নিবেদিতপ্রাণ সদস্যগণ। রোজা রেখে সারাদিন ডিউটি করার পর পরিবার পরিজনদের সাথে ইফতার করার সৌভাগ্যটাও তাদের হয় না। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে বা কাঠের বেঞ্চিতে বসে কোনমতে ইফতার সেরেই ফিরে যেতে হয় ডিউটিতে। তাদের এই ত্যাগের বিনিময়ে সামান্য প্রশংসা তো পায়ই না বরং সমালোচনা থেকে রক্ষা পেলেই যেন তারা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। সেই সব নিবেদিত প্রাণ পুলিশ সদস্যদের সাথে ডিউটি পোস্টে বসে ইফতার করেন নওগাঁ জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার প্রকৌশলী জনাব আবদুল মান্নান মিয়া বিপিএম মহোদয়। সেই সাথে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো ছিন্নমূল মানুষের হাতেও নিয়মিত পৌঁছে দেয়া হয় ইফতার।
গতবছর করোনার প্রথম ঢেউয়ে যখন সারা পৃথিবী হতবিহ্বল, অনিশ্চিত যাত্রায় মৃত্যুভয়ে যখন শঙ্কিত আমরাও সবাই, সবাই যখন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন নিরাপদে, অন্যরা যখন অস্বীকার করেছে সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া সেবা দিতে, তখন বাংলাদেশ পুলিশ সুরক্ষা সামগ্রীর জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকেনি। দেশ ও মানুষের কল্যানের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে; পথে নেমেছে। করোনায় মৃতের জানাজা ও দাফন, খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ, চিকিৎসক ও জরুরী সেবাকর্মীদের যাতায়াতে সহায়তা, শিল্প উৎপাদন ও কৃষি পণ্যের পরিবহন ও বিপননে সহায়তা ইত্যাদি নানা কাজের মাধ্যমে নিজ দায়িত্বের পরিধির অনেক বাইরে গিয়ে পুলিশ দাঁড়িয়েছে মানুষের পাশে।
আর, ঘরে বসে নয়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রত্যক্ষভাবে মাঠে থেকেই কর্তব্যরত অবস্থায় আক্রান্ত হয়ে ১৫ এপ্রিল ২০২১ খ্রি. পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের মোট ৯১ জন কর্মকর্তা ও সদস্য শাহাদাতবরণ করেছেন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন বিশ হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য।
আবারও করোনার থাবায় জর্জরিত হতে চলেছে সারাবিশ্ব। আমরাও রয়েছি প্রবল ঝুঁকিতে। প্রতিদিনই বড় হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। মৃত্যুর এই মিছিল প্রানপনে ঠেকাতে এবারও পথে রয়েছে পুলিশ। জনস্বার্থেই কঠোর হতে হচ্ছে বিধিনিষেধ আরোপ ও আইন প্রয়োগে। নিয়ন্ত্রন ও বিধিনিষেধের বেড়াজালে থাকতে না চাওয়া মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। অজনপ্রিয় এই কাজটিই করতে হয় পুলিশকে। এই কাজে সকলের সন্তুষ্টি অর্জন সহজ নয়। এখানে ব্যক্তিগত কোনো সুবিধা বা অর্জনের জন্য নয়; মানুষের কল্যণের জন্যই আইন প্রয়োগে কঠোর হওয়া জরুরী। সকলের সহযোগিতা না পেলে এই দায়িত্ব পালন অত্যন্ত কঠিন।