তহিদুল ইসলাম রাসেল, চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধানঃ
এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ প্রশাসনও এক প্রকার নিরুপায়। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এতোটাই বেশি ঘটে, পুলিশ প্রশাসন এক দলকে নিবৃত করতে গেলে অন্য দল আরেক দলের সাথে মারামারি, সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়। এখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ প্রশাসনকে সর্বদা সতর্ক অবস্থানে থাকতে হয়।
পুলিশের দাবি, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকে।
স্থানীয়রা জানান, টাংকিপাহাড়, পোড়া কলোনি, মতিঝর্ণা এলাকায় প্রতি রাতেই বসে মাদক ও জুয়ার আসর। ইস্পাহানি মোড়ে চাঁদাবাজি এবং টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন দোকানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়।
এসব টাকা কিংবা চাঁদা কাদের দিতে হয় জানতে চাইলে স্থানীয়রা ভয়ে মুখ খোলেনি।
হাই লেভেল রোডের বয়োজ্যেষ্ঠ বাসিন্দা রবিউল আলম বলেন, লালখান বাজার এখন আর আগের লালখান বাজার নেই। মাঝে মাঝে মনে হয় বেলাল (ওয়ার্ড কাউন্সিলর) আর মাসুম এই ওয়ার্ডের সরকার। প্রতিনিয়ত তাদের দুই গ্রুপের ছেলেরা মারামারিতে জড়াচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে মাসুম গ্রুপের ছেলেরা বেলাল গ্রুপের সোহেলকে ছুরি মেরে দেয়। গতকাল রাতে দুই গ্রুপ আবার মারামারিতে জড়ায়। দুইটা গ্রুপ মনে হয় লাশ চায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা চিন্তিত আছি কোন দিন দুইটা গ্রুপ খুনাখুনির ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। কোনো গ্রুপ ভালো না। উভয় গ্রুপ চাঁদাবাজি, দখলবাজিতে নিমজ্জিত। আমরা সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
গত ১২ মার্চ (শনিবার) লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) দিদারুল আলম মাসুম গ্রুপের হামলায় কাউন্সিলর বেলাল গ্রুপের অনুসারী সোহেল গুরুতর আহত হন। ঘটনার দিন দুপুরে ভিক্টিম সোহেল তার বন্ধুর অসুস্থ বোনকে দেখতে লালখান বাজারের মমতা ক্লিনিকে যান। ক্লিনিক থেকে ফেরার পথে আল আমিনের নেতৃত্বে ডেকচি শরীফ, ডেকচি সুমনসহ তার বন্ধুরা তার ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে আল আমিন সেহেলের পেটে ও মাথায় ছুরিকাঘাত করে। হামলাকারীরা সবাই দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারী বলে জানা যায়। এ ঘটনায় আল আমিন নামে মাসুমের এক অনুসারিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই মাত্র ৯ দিনের মাথায় আবারও মারামারি, সংঘর্ষে জড়ায় মাসুম গ্রুপ ও বেলাল গ্রুপ। রবিবার (২০ মার্চ) রাতে মতির্ঝণা মাছ বাজার এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত হত্যা মামলার আসামি জাহিদের সাথে একই এলাকার কাউন্সিলর বেলাল সমর্থিত আলমগীরের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে আলমগীর তার দলবল নিয়ে জাহিদের মা হোসনে আরা বেগম (৫০), ভাতিজা মাহিম (১২) ও মো. মাহাদী হাসানকে (১৯) মারধর ও কুপিয়ে জখম করে। বর্তমানে মাহাদীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মাহাদীর বাবা লালখান বাজার ইউনিট আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কবির হোসেন মহানগর নিউজকে বলেন, আলমগীর, জাকির, মুন্না, জুয়েল, এমরান, আবু কালামসহ আরও অনেকে এসে আমার বাসায় হামলা চালায়। তারা কাউন্সিলর বেলাল গ্রুপের রাজনীতি করে।
আমি একটা ফার্মেসি চালাতাম। সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকালীন সময়ে আলমগীর আমার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আলমগীরের নেতৃত্বে আমার দোকানে ভাংচুর চালায়। এ বিষয়ে আমি খুলশী থানায় অভিযোগ দায়ের করি। এটা নিয়েও তারা ক্ষুব্ধ ছিল।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সজীব, সুজন, দিদার নামে তিনজনকে গ্রেফতার করে। তারা তিনজনই কাউন্সিলর বেলালের অনুসারি। সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই এলাকায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
অপরাধের সাথে নিজ দলের কর্মীদের সম্পৃক্ততা উঠে আসলে তাদের পাশে থাকবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল। তিনি বলেন, একটি ঘটনা ঘটলে যেকোনো গ্রুপের অনুসারিদের নাম উঠে আসে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, কেউ যদি আমার মিটিং মিছিলে এসে কিংবা আমার পরিচয় দিয়ে অপরাধ করে তাহলে কালবিলম্ব না করে ব্যবস্থা সাথে সাথেই ব্যবস্থা নিন। আমি লালখান বাজার ওয়ার্ডে কোনো আধিপত্যের রাজনীতি চাই না। আমি চাই শান্তি। ওয়ার্ডের মানুষের শান্তি। অপরাধিরা যদি আমার অনুসারিও হয়, তাহলে তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।