গোপালগঞ্জ থেকে পলাশ সিকদারঃ
গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নের মৃত আজিম মোল্লার স্ত্রী ফরিদা বেগম (বেলা) ১৯৭১ সালে মুক্তি যুদ্ধের সময়ে পাকিস্থান হানাদার বাহিনীর কাছে যুদ্ধের নয় মাসের শেষের দিকে অমানবিক অত্যাচার ও ধর্ষনের শিকার হয়।
যুদ্ধপরবর্তী সময়ে এ বিরাঙ্গনা পরিবাররকে কেউই মেনে নেয় নাই, দেখেছে ঘৃনার চোখে । ১৯৭৯ সালে তার স্বামী মারা যাওয়ার পর সমাজের কু-প্রভাবশালী ও ভুমি দস্যূদের অত্যাচার তার উপর বেড়েই চলছিল। তার বড় মেয়ের বিবাহ উপযুক্ত হয়ে উঠলে সমাজের কেউই এই বিরাঙ্গনার মেয়েকে বিবাহ করতে রাজি হয় না। অনেক দুঃখ কষ্টে দুই মেয়ের ভবিৎষতের দিকে তাকিয়ে তাদের নিয়ে ১৯৮৩ সালে গ্রাম ছেড়ে সে ঢাকা চলে যান।
এ ব্যপারে বীরঙ্গনা ফরিদা বেগম (বেলা) এর কাছে জানতে চাইলে গনমাধ্যম কর্মীদের কাছে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের শেষের দিকে পাক সেনারা আমাকে ধরে নিয়ে নির্মম ভাবে অত্যাচার ও ধর্ষন করেন, যার কারনে আমি আজো অসুস্থ হয়ে আছি। দেশ স্বাধীন করার লক্ষে বাঙ্গালী জাতি হারিয়েছে ৩০ লক্ষ মা বোনের ইজ্জত। হারিয়েছে বাড়ি ঘর, জীবন দিয়েছে হাজার হাজার দামাল ছেলেরা, আজ আমাদের কোন মুল্য নাই। আমি ৭১ পাক বাহিনীর থাবায় হারিয়েছি আমার ইজ্জত, পুরুস্কার হিসাবে পেয়েছি নোংড়া সমাজপতিদের কুনজর, সেই সাথে পেয়েছি এই নোংড়া সমাজের ধিক্কার। আজো আমি আমার অধিকার ফিরে পাই নাই। আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে আমার দুই মেয়েকে নিয়ে নোংড়া সমাজের লোকেদের কু–দৃষ্টির ফলে পালিয়ে যাই ঢাকায়।ওখানে গিয়ে আমার দুই মেয়ের বিবাহ দেই। দীর্ঘ্য ২৭ বছর পরে আমি বাড়িতে আসি আমার বাবা মায়ের ভিটা-বাড়িতে, এখানে এসে দেখি আমার যা্ কিছু সম্পত্তি আছে তা দখল করে আছে, তাদের মধ্যে মৃত বেলায়েত হোসেন মোল্লার ছেলে জোবায়ের মোল্লা, আজাদ মোল্লা ও আব্বাস মোল্লা, আমি আমার জমি ফেরৎ চাইলে আমাকে বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার করেই চলেছে।
বর্তমানে আমি মানুষের বাসায় কাজ করে খাই নিজের বলতে কিছুই নেই। আমি একজন বীরাঙ্গনা এটা সকলেই জানে, আমাকে বাংলাদেশ সরকার বহুবার খুজেছে কিন্তু পায় নাই। আমি আমার মেয়েদের দিকে তাকিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম, আজ আমি আমার পৈতিক ভিটায় ফিরে এসেছি, আমি না থাকায় ভুমি দস্যূরা আমার সকল জায়গা দখল করে আছে। আজ আমি আমার জায়গা জমি ও অধিকার ফিরে পেতে চাই। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের মা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করছি, আমার সকল জায়গা জমি ভুমি দস্যূদের হাত খেকে রক্ষা ও আমার ইজ্জত হারানো সম্মান দান করে সমাজে মাথা উচু করে দাড়াতে পারি সেদিকে দৃষ্টি দান করেন।
এ ব্যপারে গোবরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যন শফিকুর রহমান চৌধুরী টুটুল এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ফরিদা বেগম(বেলা)একজন বীরাঙ্গনা। দীর্ঘ্য দিন এলাকায় না থাকায় তার সরকারী ভাবে নাম নেই, তবে সে একজন প্রকৃত বীরাঙ্গনা। বিরাঙ্গনা হিসাবে গোবরা ইউনিয়ন পরিষদের একটি প্রত্যয়ন পত্র তাকে দেওয়া হয়েছে।