গাজী মোহাম্মদ হানিফ, সোনাগাজী, ফেনী:-
সোনাগাজী উপজেলার মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় ১৯৯০ সালে নির্মিত হয় সোনাগাজীর একমাত্র সরকারি মৎস্য উৎপাদন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র। সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের অন্তর্গত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন অব্যবহৃত থাক খোয়াজের লামছি মোজার ৩৬.৩৭ একর ভূমি মৎস্য অধিদপ্তর ইজারা নিয়ে উক্ত ভূমিতে কয়েক কোটি টাকা ব্যায়ে এই মৎস্য খামারটি স্থাপন করেন।
খামারটিতে রাজস্ব খাতে ৮টি স্থায়ী পদ রয়েছে। খামারে মোট পুকুর ৮টি, লেক ১টি, অফিস ভবন ১টি, ফিস ল্যাণ্ডিং সেন্টার ১টি, গোডাউন ১টি, ডরমিটরি ১টি, গার্ড সেড ২টি ও গ্যারেজ ১টি নির্মাণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে খামারটিতে বিভিন্ন অর্থবছরে নানান সংস্কার ও উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
“মাছে ভাতে বাঙ্গালী” বিদ্যমান প্রবাদের আলোকে এই এলাকা সহ দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর আমিষের চাহিদা মেটায় এই মৎস্য উৎপাদন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রটি। এক সময়ে এই খামারে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির ও উন্নত জাতের লক্ষ লক্ষ মাছের পোনা পার্শ্ববর্তী ফেনী ও মুহুরী নদী সহ আশপাশের পুকুর ও সরকারি বেসরকারি জলাশয়ে অবমুক্ত করা হতো। উক্ত খামারটিকে কেন্দ্র করে আশপাশে শতশত বেসরকারি মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের অনেক নামীদামি কোম্পানি এখানে মৎস্য খামার করতে উদ্বুদ্ধ হয় ও বিশাল অংকের অর্থ বিনিয়োগ করে খামার স্থাপন করে। খামার স্থাপন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নতি হয়। এই প্রকল্পের সুফলে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ বাণিজ্যিক মৎস্য জোনে পরিণত হয় এই মুহুরী প্রজেক্ট এলাকা।
ফেনী জেলার সোনাগাজী ও চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই এলাকার হাজার হাজার মৎস্যচাষীরা সরকারি এই মৎস্য খামার থেকে উন্নত জাতের বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও আধুনিক প্রযুক্তিতে মাছ চাষের পরামর্শ পেয়ে থাকেন। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে উক্ত খামারটি মৎস্য খামারী ও মাছ চাষে উদ্যোক্তা তৈরী, মাছ চাষে আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, ব্যাপক জনগোষ্ঠীর আমিষের চাহিদা পুরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। অফিস থেকে প্রাপ্ত সূত্রে জানা যায় এই খামার থেকে সরকার বার্ষিক প্রায় ১৫.০০ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় পেয়ে থাকেন।
সরেজমিন পরিদর্শন করে ও বিশস্ত সূত্রে জানা যায়, সরকারের এই লাভজনক প্রকল্পটি বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে খামারের করা ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ইজারার মেয়াদ বৃদ্ধি করছেনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায় – পানি উন্নয়ন বোর্ড উক্ত খামারটির জায়গায় একটি মিঠাপানির সংরক্ষণাগার (জলাধার) নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে আরো জানা যায়- অত্র এলাকার একদিকে বড় ফেনী নদীর মতো বিশালা আকারের মিঠাপানির জলাধার বিদ্যমান, অন্যদিকে মাত্র ৩০/৪০ ফুট মাটির নীচ হতে অগভীর নলকূপের মাধ্যমে মিঠাপানি পাওয়া যায়। তাছাড়া পানি সংরক্ষণাগার নির্মাণ করার মতো মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আরও হাজার হাজার একর অব্যবহৃত ভূমি রয়েছে সেখানে জলাধার নির্মাণ করলে জনসাধারণের আপত্তি থাকবেনা।
সোনাগাজীর গুরুত্বপূর্ণ এই মৎস্য উৎপাদন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রটি বিলুপ্ত বা ধ্বংস করে অন্য একটি প্রজেক্ট করা হলে একদিকে সরকারের কোটি কোটি টাকার অপচয় হবে, অন্যদিকে সরকার প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে। এলাকার মৎস্য চাষী ও সাধারণ জনগণ সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মুহুরী প্রকল্প এলাকার ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে আর কোন সরকারি মৎস্য প্রকল্প নেই।
স্থানীয় জনগণের দাবি মৎস্য উৎপাদনে সমৃদ্ধশালী সরকারী এই “মৎস্য উৎপাদন ও সম্প্রসারণ” কেন্দ্রটি যাহাতে বিলুপ্ত বা ধ্বংস করস নাহয়। স্থায়ীভাবে এই প্রকল্পটি বিদ্যমান রাখতে এলাকাবাসী স্থানীয় সাংসদ লেঃ জেনারেল (অবঃ) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী,
ফেনীর মান্যবর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান সহ জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা ও সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার অজিত দেব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার অজিত দেব জানান- জেলা মিটিংয়ে ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা বিদ্যমান মৎস্য উৎপাদন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রটি ঐ স্থানে বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলাধার নির্মাণের জন্য বিকল্প স্থান নির্ধারণ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছি।
এই প্রকল্পটি ধ্বংস করার চেষ্টা করা হলে স্থানীয়রা এই প্রকল্প রক্ষায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন সহ বৃহত্তর কর্মসূচী নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।