আর রক্ত খুঁজবে না গোবিন্দগঞ্জের সেচ্ছাসেবী ‘অন্তরা’ :
ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে
মাঝে মধ্যে ফেসবুকের পাতা খুললেই ভেসে আসতো অন্তরার লেখা, রক্ত লাগবে অন্তঃসত্ত্বা মায়ের জন্য, শুধু অন্তঃসত্ত্বা মা নয় গাইবান্ধা তথা বগুড়া জেলার যে কোনো মুমূর্ষু রোগীর রক্তের প্রয়োজন হলেই রক্তের সন্ধান করতো অন্তরা। অন্তরা বগুড়া মজিবুর রহমান কলেজে অনার্সে লেখাপড়া করতেন। তখন থেকেই বগুড়ার রক্তদান সংগঠন গুলোর সাথে সংযুক্ত ছিলো।এরপর ২০১৮ সালে গোবিন্দগঞ্জ সেচ্ছায় রক্তদান সংগঠন এর প্রতিষ্ঠা পেলে এ সংগঠনে যুক্ত হয় অন্তরা।সংগঠনটির নারী বিষয়ক সম্পাদক পদে থেকে সেচ্ছায় রক্তদানে কাজ করেছে অন্তরা। সংগঠনের সংবাদ করতে গিয়ে ঐ বছরে কথা হয়েছিল এই প্রতিবেদক শামীমা সুমীর সাথে। সে সময় অন্তরা জানিয়েছিলো দেশে প্রতি বছর প্রায় ৫/৭ লক্ষ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয় এর মধ্যে আমাদের গোবিন্দগঞ্জেই প্রয়োজন হয় প্রায় ২০০০ ব্যাগ আর এই প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ হয় খুবই সামান্য। আর যতটুকু সরবরাহের ব্যবস্থা হয় তার ৬০ ভাগই পূরণ হয় পেশাদার রক্তদাতাদের কাছ থেকে। পেশাদার রক্তদাতাদের কাছ থেকে রক্ত গ্রহণ একদিকে যেমন ঝুঁকিপূর্ণ অন্যদিকে তেমনি অস্বাস্থ্যকর।
কারণ পেশাদার রক্তদাতারা গ্রহণ করে বিভিন্ন ড্রাগ এবং শরীরে বহন করে হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, এইডস, সিফিলিস এর মত জীবন ধ্বংশকারী বিভিন্ন রোগের জীবাণু। যে কারণে আমাদের দেশে রক্তের অভাবে প্রতিনিয়ত অসংখ্য রোগী মৃত্যুবরণ করে। তাই আমরা চাইনা যে বিশুদ্ধ রক্তের অভাবে কেউ মারা যাক।
বিশুদ্ধ রক্ত সরবরাহে সেচ্ছায় রক্তদানের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়া অন্তরা জাহান নিয়তির নির্মম পরিহাসের স্বীকার হন। ২০১৯ সালের শেষের দিকে তার নিজের শরীরের রক্ত নষ্ট হয়ে যায়। তার শরীরে ধরা পড়ে মরণব্যাধী ‘ব্লাড ক্যান্সার’। এরপর অন্যের পাশাপাশি নিজের জন্য রক্তের সন্ধান করতো হতো অন্তরাকে।সর্বশেষ গত শনিবার নিজের জন্য তিন ব্যাগ ও নেগেটিভ (হিমোগ্লোবিন-৫) রক্তের খোঁজ করছিলেন অন্তরা। তবে সে আর রক্ত খুঁজবে না। মুমূর্ষু রোগীর জন্য কখনো নিজের জন্য রক্ত সন্ধানী অন্তরা আর রক্ত খুঁজবেনা। কারণ ২ মার্চ মঙ্গলবার মরণব্যাধী কান্সারের কাছে হার মেনে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে তিনি ওপাড়ে চলে গেছেন। অন্তরা জাহান দুপুর পর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্না-লিল্লাহ ওয়াইন্না ইলাহী রাজিউন)। মৃত্যুর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক।
অন্তরা জাহান গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের উত্তর শোলাগাড়ী গ্রামের আতাউর রহমান এর মেয়ে।
অন্তরার চাচা আব্দুল জলিল জানিয়েছেন, মরহুমার জানাজা ২ মার্চ মঙ্গলবার রাত ১১টায় উত্তর শোলাগাড়ী গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে।
গোবিন্দগঞ্জ সেচ্ছায় রক্তদান সংগঠনের পরিচালক জিয়াউর রহমান জিহাদ ও সভাপতি শেখ মিনহাজ লাভলু সংগঠনটির পক্ষ থেকে অন্তরা জাহান এর মৃত্যুতে গভীর শোক এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে বলেন, এ সংগঠনে যুক্ত থাকাকালে মানবতার সেবায় নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করতেন অন্তরা। কিন্তু মরণব্যাধী কান্সারে আক্রান্ত হয়ে তার জীবনের সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।
(আমি গভীরভাবে শোকাহত। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি)।