সোহেল চৌধুরী রানা, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ ভূমি অফিস মানে অনিয়ম ও দুর্নীতির অাখড়া, আর সাধারন মানুষের হয়রানি ও ভোগান্তির কারখানা এমন ধারনা পাল্টে দিয়েছেন
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোহরাব হোসেন। ২০১৯ সালে ৪ এপ্রিল এ উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করেন তিনি।
যোগদানের পর এ কর্মকর্তার সততা, কর্মদক্ষতা, কর্মর্তৎপরতায় এবং নিরলস প্রচেষ্টায় উপজেলা ভূমি অফিসের সার্বিক উন্নয়ন সহ কর্মকান্ডে এনে দিয়েছে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গতিশীল পরিবেশ। মাত্র দুই বছরে ভূমি ব্যাবস্থাপনায় এনে দিয়েছে আমূল পরিবর্তণ। বহুগুণে বেড়ে গেছে জনসেবার মান।
দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দুনীর্তির বেড়াজাল ছিন্ন করে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তাঁর সততা ও নিষ্ঠার কারণে উপজেলা ভূমি অফিস যেন আজ পেয়েছে নতুন প্রাণ।
করোনা মোকাবেলায় সচেতনতামুলক কর্মকাণ্ড ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি সামলিয়েছেন ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত সরকারি ভাবে অর্পিত দ্বায়িত্বের সকল দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড। বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০২১ অর্জন এবং রূপকল্প ২০৪১ এর সুখী, সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন এর ধারাবাহকিতায় দেশব্যাপী চলমান শতভাগ ই মিউটেশন বাস্তবায়ন, মিস মোকদ্দমাসমূহ নিষ্পত্তিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি ভূমি সেবার মানোন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলা ভূমি এ কর্মকর্তা। ভূমি রেকর্ড ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন করণ সহ উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মপরিবেশের মান উন্নয়নে সকল প্রকার অনিয়ম দুর করতে ঢেলে সাজিয়েছেন উপজেলার ভূমি অফিস।
মোবাইল এ ই- নামজারী, মিসকেসসহ সকল ধরণের শুনানির নোটিশ জারীর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রেকর্ড রুমটি সুবিন্যস্ত করে সুসজ্জিত করে সাজানো হয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের বিরাজমান সকল অনিয়ম দুর্নীতির আখড়া উচ্ছেদ করে উপজেলা ভূমি ব্যবস্থাপনা কে সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য ঢেলে সাজাচ্ছেন বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোহরাব হোসেন। জমির খাজনা, নামজারী, মিস কেস সহ অন্যান্য কার্যক্রমে কোন মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় সে দিকে নিয়মিত নজরদারী রাখছেন তিনি এবং দ্রুত সমাধান করে যাচ্ছেন। কঠোর তৎপরতার মুখে অফিসগুলোতে জনসেবার মান যেমন বেড়েছে তেমনি এধরণের নানা কর্মকান্ডে ফিরে এসেছে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের বিভিন্ন কাজে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর উপর ভরসা না করে তিনি নিজেই তদারকি করেন। সারাদিন যখনি কোন লোক কাজে তাঁর শরণাপন্ন হন তখনই খুব আন্তরিকতার সাথে তাঁদের কথা শুনেন এবং তড়িৎ ব্যবস্থা নেন। নিয়মিত মাসিক মিটিংয়ে তিনি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সততা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন। এবং কারো কাজে গাফিলতি ও অনিয়ম অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ফলে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তার প্রতি কিছুটা অসন্তোষ হলেও সততার সাথে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সাপাহার উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মচারীর সাথে আলাপ কালে তিনি জানান, স্যার সরকারী আইনের বাইরে কোন কাজ করেন না। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সাপাহার উপজেলা ভূমি অফিস প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তিনি সরকারী আইন কানুন ও বিধিবিধানের আলোকে জনকল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সাহসের সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তবে সকলের সহযোগিতা পেলে আরো ভালো কিছু সম্ভব বলে অনেকে মতামত ব্যাক্ত করেন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, করোনা মহামারীর মধ্যেও ভূমি রাজস্ব আদায়ে সাপাহার উপজেলা ভূমি অফিস সফল হয়েছে। ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থ বছরে ২৮.৫০ একর খাস জমি উদ্ধার করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের লক্ষে ২০২০-২১ অর্থ বছরে ‘ক’ শ্রেণির ১২০ টি ভূমিহীন পরিবারকে খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদানপূর্বক নামজারী খতিয়ান ও দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো ৬০ টি পরিবারেরে অনুকূলে বন্দোবস্ত প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানাযায়। দীর্ঘদিনের জটিলতার অবসান ঘটিয়ে অপদখল হতে যাওয়া সরকারি জলমহল সমূহ সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বিধি মোতাবেক ইজারা প্রদান করেন তিনি। ফলে সরকারী কোষাগার সমৃদ্ধ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ের মাধ্যমে।
সাপাহার উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার প্রতিবেদককে জানান দুই বছর যাবত ভূমি সংক্রান্ত যে সুবিধা আমরা পাচ্ছি তা অতীতে কোনদিনও পাইনি। বর্তমানে সাধারণ মানুষকে কোন প্রকার হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে না বলেও জানান তিনি। তাঁর নেওয়া এই কর্মকান্ডগুলোকে যুগান্তকারী সাহসী পদক্ষেপ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন স্থানীয় ও কর্মচারীদের মধ্যে অনেকেই।