জমশেদ আলী,চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক তাজকির-উজ্জ-জামান এর ব্যতিক্রমী উদ্যেগের কথা বলছি। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করে শুরু হতে তিনি পর্যটনের অপর সম্ভবনাময় জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ও জেলার উল্লেখযোগ্য স্থাপনা তুলে ধরতে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কর্মই একমাত্র তাঁর ধ্যান ও জ্ঞান। কর্ম পাগল এই মানুষটি সকাল থেকে গভীর রাত অবধি তাঁর উপর অর্পিত সকল সরকারি দায়িত্ব পালনে নিরলস পরিশ্রম করে চলছেন। তাঁর সাথে কোন বিশেষ প্রয়োজনে, রাত আর দিনই হোক তাঁর দেখা মেলেনি এমন ঘটনা বিরল! দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী, অসহায় ও পিছিয়ে পড়া মানুষকে সহযোগিতা, চিকিৎসাবঞ্চিতদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা, করোনায় সংকটে জেলা প্রশাসনের পুরো টিমকে নিয়ে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে কাজ করানো, লকডাউনে দুস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো,ক্ষুধার্থদের খাবার পৌঁছানো যা তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে করছেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ.কে.এম তাজকির-উজ্জ জামান বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদনোতি পেয়ে স্থানীয় সরকারে উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। হ্যাঁ-এতক্ষণ তার কথাই বলছিলাম। সরকারের সকল এজেন্ডা বাস্তবায়নের পাশাপাশি সমাজের কল্যাণে নিরলস ভাবে কাজ করে থাকেন এই জেলা প্রশাসক। তার ব্যতিক্রমী উদ্যেগে ও ডিজাইনের মাধ্যমে মুজিব শতবর্ষ উদযাপন করে সারাদেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের সামনে মনোমুগদ্ধকর প্ল্যাসটিকের বোতল দিয়ে তৈরী ঘর ও আলোকসজ্জা দেখতে জেলা ও জেলার বাহির থেকে অসংখ্য মানুষ আসতেন দেখতে । দর্শানর্থীরা সন্ধ্যার পরে বোতলের তৈরী ঘরের আলোকসজ্জার ছবিতুলে নিজ নিজ ফেসবুকে পুরো দেশবাসীকে তাকলাগিয়ে দিয়েছেন। মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে নৌকার তৈরী মঞ্চ তৈরী করে প্রায় ৩ মাস ব্যাপী জেলার স্থানীয় শিল্পীদের দিয়ে নানান ধরনের অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে গত দুই বছরের প্রায় ২৮ টি প্রকাশনা বাহির করেছেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে শত ব্যাস্ততার মাঝে নিজস্ব কাজের রুটিন এর বাহিরে গিয়ে সৃজনশীল এত কিছু করা যায় যার উজ্জ¦ল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক এ.কে.এম তাজকির-উজ্জ-জামান।সমৃদ্ধ এই প্রকাশনাগুলিতে তথ্য সংগ্রহ ,সম্পাদনা আর ছাপানোর জটিল কাজ তিনি এক হাতে সামাল দিয়েছেন।
আমার বিদ্যালয়ঃ
জেলার ৭০৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তথ্য,উপাত্ত ,ছবি,কুতি-ছাত্র-শিক্ষকের তথ্য সংগ্রহ করে এর মধ্যে থেকে ১০০ টি বিদ্যালয়ের তথ্য নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে প্রায় ৬৫০ পৃষ্ঠার বিশাল সংগ্রহ,: আমার বিদ্যালয়” এর প্রথম খন্ড। ইতিমধ্যে এই সংকলনটি সমাদৃত হয়েছে।
”তৃণমূল বার্তা”ঃ
জেলার ৪৫টি ইউনিয়ন পরিষদের যাবতীয় তথ্য নিয়ে প্রায় ৪৫০ পৃষ্ঠার প্রকাশিত :তৃণমূল বার্তা” একটি অত্যান্ত তথ্যবহুল বিশাল প্রকাশনা
এই সংকলনে একটা ইউনিয়ন পরিষদের সামগ্রিক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রতিনিধি, গ্রাম পুলিশ, উল্লেখযোগ্য কাজ, সমস্যা সম্ভাবনার পাশাপাশি প্রধান প্রধান তথ্যগুলি সন্নিবেশিত করা হয়েছে। বিগত পাঁচ বছরের প্রধান প্রধান কাজ গুলি এখানে স্থান পেয়েছে। ভবিষ্যতে স্থানীয় সরকারের বিশেষত ইউনিয়ন পরিষদ এর উন্নয়নে সংকলনটি কাজে আসবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাবা কে নিয়ে লিখা ” আমার পিতা শেখ মুজিব” মা কে নিয়ে লেখা : ”বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা” ছোট ভাই রাসেলকে নিয়ে লেখা ” ছোট রাসেল সোনা” শেখ রেহানার বাবাকে নিয়ে লেখা ” আমার পিতা” ভাজপত্র হিসেবে প্রকাশ করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা হয়েছে।
”বঙ্গবন্ধুকে জানি”
শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশ্নোত্তর মূলক বই” বঙ্গবন্ধকে জানি” বিপুল সাড়া ফেলেছে। সাত ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ,দেশাত্তবোধক কবিতা,বই পড়াকে উৎসাহ দিতে বুকমার্ক ও ছাপানো হয়েছে।
”অগ্নিস্বাক্ষর” ঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভাতাভোগী জীবিত সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের ছবি, পরিচিতি আর স্বাক্ষর নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে “অগ্নিস্বাক্ষর”। যে সকল বীর মুক্তিযুদ্ধের গণের অকুতোভয় আর অসীম সাহস এই দেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছিল নীল আকাশে – এই সংকলন তাঁদের জন্যই। সংকলন টি প্রায় ৬৩৫ পাতার। ১২০০ জন ভাতাভোগী জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধার কথা এখানে ঠাই পেয়েছে। কোন কোন বই এ একটা ঘটনায় একজন নায়ক থাকে, এই বই/সংকলন এ নায়ক বারোশজন। এই সংকলনে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিজ হাতে লিখেছেন তাঁদের অনুভূতি। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এখনো তাঁদের লেখনি উদ্বধু করবে নতুন প্রজন্মের। তিনি জানান এত গুলো বীর নায়ককে বাংলাদেশের সিনেমার এই বিশাল ক্যানভাসে চিত্রায়িত করা ছিল খুবই চ্যালেঞ্জের। সময় এর সীমাবদ্ধাতাকে অতিক্রম করা আর ছাপাখানার ভূতের সাথে যুদ্ধ করে এগিয়ে যেতে হয়েছে। তথ্য যাচাই বাছাই করে সেটাকে শেষ পর্যন্ত ঠিক করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তারপরেও আছে মনের প্রশান্তি – অস্পষ্ট হলেও আছে একটা পদচিহ্ন। যেটা পথভ্রষ্ট নয় বরং সামনে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাবার প্রত্যয়।
আমের ১০০ জাতঃ
দেশে আমের জাত ৮০০ রকমের, এর মধ্যে ৩৫০ জাতের আম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতে পাওয়া যায়। সে কি তাদের বাহারি নাম- আর কি ই বা তাদের স্বাদ। সিদুরগুটি, ক্যারাবাউ,দেওভোগ,মিশ্রিদাগি, শ্যামলতা, মধুরাণী,চন্দনখোস সহ আরো কত কি? এমন প্রচলিত ১০০ আমের গাছের ছবি, আমের বর্ণনা, ফলের তথ্য, বীজের তথ্য, খোসার তথ্য, সগ্রহ ও সংরক্ষণকাল, ফল উৎপাদনশীলতা ও ধারণ, ব্যবহার, চাষযোগ্য এলাকা এবং ফলনের তথ্য নিয়ে আমের এলবাম “আমের ১০০ জাত” প্রকাশিত হল।
পর্যটনঃ পর্যটনের অপর সম্ভাবনাময় জেলা হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ । জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সম্পর্কে জানতে ও দেখতে সঠিক নির্দেশনার জন্য ৬৪ পাতার ” চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যটন গাইড ” প্রকাশিত হয়েছে। ৬৪ পাতার এই গাইড হাতে থাকলে যেকেউ চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর উল্লেখযোগ্য ২৫ টি দর্শনীয় স্থানের বর্ণনা সম্পর্কে জানতে পারবেন। প্রতিটি স্থানের ছবি আর বিবরণ আপনাকে ঐ এলাকা ভ্রমণে উৎসাহিত করবে। একই সাথে সেখানে যাবার ঠিকানা, যোগাযোগের বিবরণ,উল্লেখ করা হয়েছে। এই জেলার ঐতিহ্য, খাবার, সংস্কৃতি, আবাসন, যাতায়াত ব্যবস্থার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। অনলাইন প্লাটফর্মে ও শীঘ্রই আপলোড করার কথাও উল্লেখ করেন।
জেলা প্রশাসকের ছাদের উপর ফুলের বাগানঃ
অফিসের দোতলার পড়ে থাকা ছাদটাকে কাজে লাগানো হয়েছে। বর্তমানে ফলজ, বনজ, ঔষধি সব মিলিয়ে প্রায় ৯০ প্রজাতির গাছ আছে। ট্রেনিং মাঝে ওপেন সেশন, নাগরিকদের সময় কাটানো আর ছোট-খাট কোন অনুষ্ঠান যাতে সবুজের মাঝে করা যায়, তার জন্য এই ধরনের উদ্যোগকে সুশিলসমাজের লোকেরা সাধুবাদ দিয়েছেন।
স্বাধীনতার এর সুবর্ণ জয়ন্তী ঃ
স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ দাওয়াত পত্র পৌঁছে দিয়েছেন। জেলার সব বাড়ীতে পৌঁছে দিয়েছেন বিজয়ের বার্তা।জেলা প্রশাসনের প্রাপ্তি আর আসীম সম্ভাবনা কে তুলে ধরে নতুন প্রজন্ম, দেশকে নিয়ে যাবে উন্নত বিশ্বের কাতারে – এটাই প্রত্যাশা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যটন গাইড” ঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের দেশ। আর আম কে কেন্দ্র করে “মাংগো ট্যুরিজম ” নিয়ে কাজ করার করেছেন। ব্রশিয়ার-চলো বেড়াই, পর্যটক গাইড বই, মোবাইল এপ্যাস দূরে কোথাও তৈরী, ভিজিটিং কার্ড তৈরি, পর্যটন স্থানসমূহ চিহ্নিত করা ও তথ্য বোর্ড স্থাপন করা, উপজেলা ভিত্তিক পর্যটন সেল স্থাপন, রাজশাহী রেল ও বিমানবন্দরে পর্যটন বোর্ড স্থাপন, ঢাকায় কল্যানপুর বাসস্ট্যান্ড বিভিন্ন স্থানে পর্যটন বোর্ড স্থাপন করা এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। সবাই এই জেলায় আসবেন, ঘুরবেন, কেনাকাটা করবেন আর আমের মজার অতুলনীয় স্বাদ গ্রহন করবেন এই প্রত্যাশা করেন তিনি।
শিশু পার্কঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনগনের প্রাণের দাবি ছিলো শহরের প্রাণ কেন্দ্রে শিশুদের জন্য বিনোদন কেন্দ্র তৈরী করা । চাঁপাইনবাবগঞ্জে খুবই শিঘ্রই শিশু পার্কের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। তার বাস্তবায়ন করে দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
স্কাউট ভবনঃ
অনেক দিনের স্বপ্ন চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্কাউট এর ভবন তৈরী হবে।তিনি তার বাস্তবায়ন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। যা চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর ইতিহাসে স্কাউট ভবন তৈরীর মাধ্যদিয়ে ক্রীড়া প্রেমিকদের কাছে স্বরণীয় হয়ে থাকবে। ক্রীড়া প্রেমিকদের উৎসাহ যোগাতে সহযোগিতা এ ভবনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।স্কাউটস হিসেবে উডব্যাজ প্রাপ্তি তিনি।
উদ্যোক্তা তৈরীঃ বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডা এর প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরীতে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ভিশন ২০২১-২০৪১ এবং করোনা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনাসহ সরকারের সকল নির্দেশনা ও নীতির আলোকে গৃহীত ও বাস্তবায়নাধীন নানামুখী পদক্ষেপের কারণে সমগ্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ জুড়ে ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে এক নতুন উদ্দীপনা। তবে বহুগুণে গুণনিত ব্যাক্তিটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে বদলিজনিত বিদ্যায় নিচ্ছেন খুবই শিঘ্রই। জেলা বাসির পক্ষে হতে অনেক সুশীলসমাজের লোকেরা মনে করেন তাজকির-উজ্জ-জামান জেলার জন্য যা করে গেলেন তা স্বরণীয় হয়ে থাকেবে।