রংপুর প্রতিনিধিঃ
অপরাধীরা অপরাধ সংগঠিত করবে আর দেশে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তা প্রতিহত করতে প্রশাসনেরও ভূমিকার নেই কোনো জুড়ি । দেশে যে কটি বাহিনী রয়েছে তারমধ্যে জনগণের সাথে সরাসরি কাজ করে থাকে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী । আবার দেশে পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগেরও শেষ নেই সাধারণ মানুষের । আবার অন্যথায় পুলিশ সাধারণ মানুষের এক আস্থা ও বিশ্বাসের নামও বটে । সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে সবসময় কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ । আবার সাধারণ মানুষকে হয়রানির আরেক নামও যদি হয় সেটার নামও পুলিশ অভিযোগ সাধারণ মানুষের । আবার পুলিশের কিছু সদস্য বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত থাকার দায়ে অনেকের হয়েছে শাস্তিও । তাই পুলিশকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মন্তব্যেরও অন্ত নেই ।
অপরাধীরা তো প্রশাসনের শত্রু এবং সবসময় শত্রু হিসেবেই দেখবে এটাই বাস্তব , প্রশাসনের উপর অর্পিত রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে সেগুলো সঠিকভাবে পালন করলে তবেই রাষ্ট্র হবে নিরাপদ এবং দূর্নীতিবাজদের হবে সাঁজা। পুলিশ সদস্যরা দেশে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অপরাধীদের অপরাধ সংঘটনে বাধা প্রদান করবেই তবে অপরাধীরা তাদের অপরাধকে ঢাকতে বিভিন্ন পন্থাও অবলম্বন করবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়৷ আর পন্থা অবলম্বন বা ম্যানেজ করতে না পারলে ঐসব কর্মকর্তাদেরকে অপরাধীরা সবসময় খুঁজতে থাকে বিপাকে ফেলে নিজ স্বার্থ উদ্দেশ্য হাসিলের ।
সম্প্রতি রংপুরের পীরগঞ্জে একটি ভিডিওকে নিয়ে তোলপাড় পুরো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং আলোচনার ঝড়ও উঠে একজন পুলিশ কর্মকর্তার নামে ৷ সে পীরগঞ্জ থানার ওসি জাকির হোসেন । ওসিকে ঘুষ দিয়েছে কেউ একজন সেটি আবার আড়াল থেকে ভিডিও ধারণ করা হয় সেই লেনদেনের অথচ ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায় ওসিকে যে ব্যক্তি অর্থ প্রদান করছেন সে একজন বালু সিন্ডিকেটের সদস্য নাম রাসেল মিয়া, যে ভিডিও ধারণ করেছে সেও বালু সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য নাম উজ্জ্বল মিয়া। অর্থ লেনদেন এর যে ভিডিওটিতে সেখানে দেখা যায় যে ব্যক্তি অর্থ দিতে চেয়েছিলেন ওসিকে ওসি তা গ্রহণ করেননি । ঘুষ লেনদেনের ভিডিওটি নিয়ে রংপুর পীরগঞ্জের সুশীল সমাজসহ সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে । অনেকেই মনে করছেন ওসি জাকির হোসেনকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে টাকা লেনদেন এর একটি ভিডিও ধারণ করে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে । একজন সৎ, যোগ্য, নিষ্ঠাবান, দায়িত্বশীল পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে এমন নেক্যারজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন অনেকেই ।
পীরগঞ্জ থানায় পদোন্নতি পেয়েই থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহন করেছেন এবং পীরগঞ্জ থানাটিকে একটি আদর্শ ও মডেল থানাতে রুপান্তরিত করতে চেষ্টার কোনো কমতি ছিলো না তার এবং পীরগঞ্জ থানাটিকে দুর্নীতি ও দালাল মুক্ত করার জোরালো পদক্ষেপ ছিলো ওসি জাকির হোসেনের । পীরগঞ্জের সাধারণ মানুষ বলছেন ওসি সাহেবকে টাকা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে । তিনি সর্বদা অপরাধীদের বিরুদ্ধে আপোষহীন ছিলেন, ওসির রুমে সাধারণ মানুষের পদচারণা ছিলো চোখে পড়ার মতো ভ্যান চালক, ভিক্ষুকসহ সবধরনের মানুষ ওসির অনুমতি ব্যতিরেকেই সবাই ওসির রুমে প্রবেশ করে মনের সব কথা খুলে বলতে পারতেন৷ একটা সময় ছিলো সাধারণ মানুষ ওসির রুম পর্যন্ত যেতেই পারতো না আর ওসি জাকির হোসেন এর সময়কালে চিত্র ছিলো ভিন্ন ।
ভিডিও তে অর্থ লেনদেন এর পুরো ঘটনাটিতে পীরগঞ্জের কতিপয় অসাধু বালু ব্যাবসায়ীরা চায়না সেভেন্ত ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন কর্পোরেশন এর ডিপিএম মিঃ ইয়ানানান (চায়না) ও ইঞ্জিনিয়ার সৌরভ ঘোষকে আক্রমণ করে শারীরিকভাবে আহত করার ঘটনা ঘটে সেই ঘটনায় পীরগঞ্জের ওসি জাকির হোসেন আক্রমণের ঘটনায় অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে আাসামীদের আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হয় । আর বালু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় সেই থেকেই ওসির পিছু নেয় বালু সিন্ডিকেটের সদস্যরা । সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিশোধ নিতেই হয়তো ওসির সাথে ঘুষ বাণিজ্যের নাটক সাজানো হয়েছে বলে মনে করছেন পীরগঞ্জের সুধীমহল ।
ভিডিও ক্লিপে দেখা যায় জনৈক ঘুষ দিতে চেষ্টা করেছিলো ঠিকই কিন্তুু ওসি ঘুষ গ্রহন করেননি বরং ফিরিয়ে দিয়ে এও বলেছেন জীবনে অনেক টাকা ইনকাম করেছি অবৈধ টাকার আমার দরকার নাই। ভিডিওতে দেখা যায় প্রদত্ত টাকা সেই বালু সিন্ডিকেটের সদস্য ফেরত নিয়ে তার পকেটেই রেখে দেন ।
ওসি জাকির হোসেনকে পরিকল্পিত ভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে মনে করছেন সাধারণ মানুষ । জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা বলেও মনে করছেন পীরগঞ্জের সুশীল সমাজ ।
পীরগঞ্জের সুধীজনদের দাবী ওসির বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগ সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষনসহ পীরগঞ্জ থানার সার্বিক অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে ওসি জাকির হোসেনের মতো যোগ্য কর্মকর্তাকে পীরগঞ্জ থানাতেই পূর্নবহাল করা হয় এমন প্রত্যাশা করেন এবং ওসির প্রত্যাহার নিয়েও বেশ ক্ষুব্ধ পীরগঞ্জবাসী।
রংপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ইফতেখায়ের আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ভিডিওতে টাকা লেনদেনের বিষয়েটি দেখা গেছে। সোমবার বিকেলে তাকে পীরগঞ্জ থানা থেকে প্রত্যাহার করে রংপুর পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে ।
এ বিষয়ে পীরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, কিছু দিন আগে বালু ব্যবসায়ীদের দুটি পক্ষের মধ্যে অর্থনৈতিক লেনদেন নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় আমার কাছে আসলে আমি তাদেরকে নিয়ে সমাধানের জন্য বসেছিলাম। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে টাকার লেনদেন হয়েছে। সেখানে তারা নিজেদের সমস্যা নিরসন করে। ওইদিন তাদের কেউ আমাকে ব্ল্যাকমেইলের উদ্দেশ্যে এ ধরনের ভিডিও ধারণ করেছে। প্রকৃত পক্ষে সেখানে আমার সঙ্গে কারো কোনো অর্থনৈতিক লেনদেন হয়নি। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ইফতেখায়ের আলম জানান, প্রাথমিকভাবে একটি অর্থ লেনদেনের ভিডিও পাওয়া গেছে এবং বিষয়টি নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।
পীরগঞ্জের সুধীজনসহ সাধারণ মানুষের প্রিয় পুলিশ কর্মকর্তা ওসি জাকির হোসেন কে পীরগঞ্জ থানায় পুনরায় ওসি হিসেবে দেখতে চায় । ওসি জাকির হোসেন কে যারা অন্যায়ভাবে ফাঁসাতে ঘুষ লেনদেনের ভিডিও’র নাটক সাজিয়েছে তাদেরকেও সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনার জোরালো দাবী জানায় পীরগঞ্জবাসী।