নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে আরও বেড কীভাবে বাড়ানো যায়, আরও চিকিৎসা সরঞ্জামাদির কীভাবে ব্যবস্থা করা যায় এবং এখানকার রোগীদের যেন আরও বেশি স্বাস্থ্য সেবা দেয়া যায় এসব বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি বলে জানিয়েছেন,
আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক সদর হাসতপাল পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। রোববার দুপুরে ১ দিনের সফরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি ঠিকভাবে না মানি সেক্ষেত্রে করোনার সংক্রমণ ছড়াতেই পারে। ঈদের সময়ও অনেক মানুষ যাতায়াত করেছে, ঢাকা থেকে বা অন্য জেলা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসেছে। বিভিন্ন কারণেই কিন্তু সংক্রমণ ছড়াতে পারে। ভাইরাস কোথা থেকে এসেছে এ প্রশ্নের চেয়ে বেশি জরুরি হচ্ছে, আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানি করোনা সংক্রমণ ছড়াবে। স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া, মাস্ক পরা ছাড়া অর্থাৎ মাস্ক ব্যবহার ঠিকমতো না করলে করোনা সংক্রমণ কোনোভাবেই আটকানো যাবে না।
সুতরাং মাস্ক ব্যবহার করাটা জরুরি, কোন ভ্যারিয়েন্ট সেটা জরুরি না। যার মধ্যে সংক্রমণ যাবে, তিনি কিন্তু জানবেন না কোন ভ্যারিয়েন্ট। আমরা যারা পলিসি দেই তাদের জন্য ভ্যারিয়েন্ট জানাটা প্রয়োজন। কাজেই যে দেশের যে ভ্যারিয়েন্টই হোক না কেন প্রতিরোধের একটাই উপায় হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মানা।
তিনি বলেন, অনেক উন্নত দেশে আপনারা দেখেছেন। তারাও কিন্তু পারেনি। আমি মনে করি সংক্রমণ বাড়লে যে কোনো দেশের জন্য এটা বিরাট চাপ। তখন নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসাটা ব্যাহত হবে। কেননা নন-কোভিড রোগীদের বিছানাগুলো কোভিড রোগীদের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। সেজন্য আমরা বারবার বলে থাকি, করোনা যাতে না বাড়ে সে জন্য সবাই যেন সম্মিলিত ভাবে কাজ করি।
তিনি আরও বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে খুব কঠোরভাবে লকডাউন পালন করা হচ্ছে। সবাই মাস্ক ব্যবহার করছে, যেটা অন্য জেলার জন্য উদাহরণ হতে পারে। এখানকার করোনার যে মেজারগুলো আমরা নিয়েছি, অতিসাম্প্রতিক কালের নিয়েছি। যে কোনো মেজার নেয়ার রেজাল্ট যদি দেখতে হয় তাহলে দুই-তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়। তিনি বলেন, আমরা সপ্তাহব্যাপী বিশ্লেষণে দেখেছি চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংক্রমণ বাড়েনি, আবার কমেনি। বাড়েনি এটাই হচ্ছে লকডাউনের আপাতত ফলাফল। লকডাউন যদি না দেয়া হতো, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলত তাহলে এটা ১০০ পারসেন্টে যেতে পারত।
তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণটা মোটামুটি এখন স্থিতিশীল আছে। এটাকে কমিয়ে আনতে হলে আমাদের এই কার্যক্রমকে আরো কন্টিনিউ করতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ যদি বের না হই, এই যে এত জমায়েত করেছে এরকম জমায়েত করোনার জন্য উপযোগী না।
লকডাউন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে অধ্যাপক মীরজাদী বলেন, এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। আমরা বলতে পারি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটা খুবই জরুরি। চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আপাতত রাজশাহীতে ক্যাপাসিটি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। যাতে আরও বেশি পরীক্ষা করা যায়। এর আগে সকালে রাজশাহী বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ স্থলবন্দরে পরিদর্শনে যান ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।
পরে পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেডের সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ফ্লোরা করোনা রোধে বিভিন্ন পরামর্শ দেন।
বৈঠকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরীসহ সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদীর সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক ও সংক্রামক রোগ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা ও আইএইচআর’র সিনিয়র অ্যাডভাইজার ডা. নাসির আহমেদ খানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আরিফুর রেজা ইমন জানান, আমাদের জেলার মত অনেক জেলায় পিসিআর ল্যাব, আইসিইউ ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের জেলায় আইসিইউ ও পিসিআর ল্যাব সেবার ব্যবস্থা করা হয় নি। ইমন আরও জানান, অনেক জেলায় ২০ টির বেশি আইসিইউ ও ২ টির বেশি পিসিআর ল্যাব আছে। তাই সীমান্তবর্তী জেলায় পিসিআর ও আইসিইউ সেবা দ্রুত চালুর জোর দাবি জানাচ্ছি।
ডি এম কপোত নবী।